নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নতুন বছরের শুরুতেই টলিউডে ফের শোকের ছায়া। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত হলেন বাঘাযতীন ছবির পরিচালক অরুণ রায়। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। সপ্তাহখানেক আগেই ফুসফুসের সংক্রমণের জেরে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাজ পাগল এই মানুষটি অসুস্থতাকে পাত্তা না দিয়ে যেভাবে একের পর এক চলচ্চিত্রের চিত্রায়ণের কাজ করে গেছেন আজ বছর বয়সে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন। চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন। গত শনিবার অভিনেতা দেব তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। কথাও হয় অভিনেতার সঙ্গে। বাঘাযতীন ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন।
এদিন অরুণ রায়ের প্রয়াণের খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে ছোটেন জুনিয়র চিকিৎসক তথা অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট করেন তিনি। কিঞ্জল লেখেন, ‘হীরালালের মতোই… আমার হীরালাল… ভাল থেকো।’ এর পাশাপাশি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও জানান, এদিন প্রয়াত পরিচালককে ১টায় তাঁর হরিদেবপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখা থাকবে মরদেহ।প্রসঙ্গত, অভিনেতা তথা চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দই আরজি কর হাসপাতালে এই পরিচালকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অরুণ রায়ের হাত ধরেই তাঁর অভিনয় জগতে হাতেখড়ি।
টলিউডের অভিনেত্রী অনুষ্কা চক্রবর্তী অরুণ রায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি জানান, ‘রাত ১১টা নাগাদ যখন হাসপাতাল থেকে বেরোলাম তখনই উনার অবস্থার অনেকটাই অবনতি হয়েছিল। তারপর ভোর ৬টা ৩০মিনিট নাগাদ আবার একটা অ্যাটাক হয় তাঁর। আধঘন্টার মধ্যে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায়, আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।’ অরুণ রায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা টলিউড। তাঁর চলচ্চিত্র জগতে অবদানের কথা স্মরণ করে শোক ব্যক্ত করেন টলিপাড়ার সহকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২৩-এর দুর্গা পুজোয় মুক্তি পেয়েছিল অরুণ রায় পরিচালিত ও দেব অভিনীত ছবি ‘বাঘা যতীন’। ছবি চলাকালীনই শোনা যায় তাঁর অসুস্থতার কথা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও কাজের সঙ্গে আপোষ করতে রাজি নন এই পরিচালক। গত বছরের শেষের দিকেও বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেই সময়
হাসপাতালে অনেকদিন চিকিৎসাধীনও ছিলেন। কেমোথেরাপি চলাকালীনও তিনি শ্যুটিংয়ের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। এমনকী শোনা যায়, বাঘা যতীনের শ্যুটিংয়ের সময় অসুস্থ থাকা স্বত্ত্বেও কাজ থামাননি। প্রথম স্টেজেই খাদ্যনালীতে ক্যানসার বাসা বাঁধলেও বাঘা যতীন ছাড়াও অরণ্যের দিন রাত্রি ছবির কাজও শেষ করেছিলেন তিনি।
জীবনের কঠিন সময়েও তিনি ছিলেন ভীষণ পজিটিভ। যখনই তাঁর শারীরিক অসুস্থতা ক্যানসার সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। তাঁর মতে, এই রোগ তো যে কারোরই হতে পারে। এটা তো কোনও আলোচ্য বিষয় হতে পারে না। রোগকে গুরুত্ব না দিয়ে কাজ পাগল পরিচালক অরুণ রায়ের মনোবলের তারিফ করেন ইন্ডাস্ট্রির সকলেই। তাঁদের আশা তিনি এই লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হবেন। সুস্থ হয়ে ফের কাজে ফিরবেন সেই আশাই করছেন টলিউডের সহকর্মীরা। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই তাঁদের আশা ব্যর্থ করে তিনি পাড়ি দিলেন অমৃতলোকের পথে।