নিজস্ব প্রতিনিধি,মুর্শিদাবাদ: দাদাকে বাঁচাতে ট্রেন থেকে মরণঝাঁপ বোনের, মর্মান্তিক পরিণতি।
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা, যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা’ এবার যেন সেই কথাই একেবারে বাস্তবের রূপ পেল চোখ ভেজানো পরিণতিতে। দাদাকে বাঁচাতে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ বোনের, তবু হল না শেষ রক্ষা। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারালেন দাদা, বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি বোন।
ঘটনাটি বহরমপুরের। ট্রেন থেকে পা ফস্কে পড়লেন যুবক, দাদাকে বাঁচাতে মরণঝাঁপ দিলেন বোনও।
গরমের সময় আইসক্রিমের ব্যবসা করতেন ইনামুল। অন্য সময় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। ইনামুল হরিহরপাড়ার গোবরগাড়া এলাকার বাসিন্দা। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। গরিবের সংসারে একমাত্র উপায়দার ইনামুলকে ভাগ্যের খেলায় আচমকাই খোয়াতে হল প্রাণ।
দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী রয়েছে তাঁর। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ইনামুলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন সকলে। বোনকে ট্রেনে তুলতে যাচ্ছিলেন দাদা। বহরমপুর স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে পা ফসকে পড়ে গেলেন প্লাটফর্মে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল ইনামুল মণ্ডল নামে ব্যক্তির। কামরা জুড়ে চিৎকার ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই আরেক কাণ্ড।
তারপরেই দাদাকে বাঁচাতে আরেকটা ঝাঁপ!
দাদাকে বাঁচাতে তত ক্ষণে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন বোনও। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি তিনি।
উত্তরাখণ্ড থেকে মুর্শিদাবাদের বাড়িতে এসেছিল ইনামুলের দুই বোন। বুধবার রাতে দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ বহরমপুর এর খাগড়াঘাট স্টেশনে গিয়েছিলেন দাদা। কথা ছিল হাওড়া পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে দুই বোনকে উত্তরাখণ্ডগামী ট্রেনে তুলে দিতে আসেন তিনি। হাওড়াগামী ট্রেনে ওঠেন সকলে। প্ল্যাটফর্মে কিছু জিনিস ভুলে ফেলে এসেছিলেন তাঁরা। তড়িঘড়ি সেই জিনিস নিতে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে যান দাদা। আর তখনই পা পিছলে বিপত্তি।
আর তখনই ঘটে বিপদ। ট্রেন থেকে নামার সময় পা ফসকে ট্রেন এবং প্ল্যাটফর্মের মাঝে পড়ে যান ইনামুল। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দাদাকে বাঁচাতে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন এক বোন। তিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি। মৃতের এক আত্মীয় মাইনুল ইসলাম মণ্ডল জানিয়েছেন, গরমের সময় আইসক্রিমের ব্যবসা করতেন ইনামুল। অন্য সময় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী রয়েছে তাঁর। দিন পনেরো হল দাদুও হয়েছিলেন ইনামুল। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ইনামুলের আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়েরা। পরিবার পরিজন ফেলে ক্ষণিকের ভুলে এক পরিবারের ছন্নছাড়া হওয়ার সাক্ষী রইলো গোটা স্টেশন।