এবার রঙ্গমঞ্চে বাঙালির অস্তিত্বের সংকট

জেলা বিনোদন

নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ দিনাজপুর : ‘রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি’—এই তীব্র আত্মসমালোচনার মধ্যে দিয়ে সমাজের সামনে বাঙালির অস্তিত্বের সংকট তুলে ধরলেন নাট্যকার অম্বরিশ সরকার। রবিবার, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি অম্বরিশ সরকারের নাট্য সংস্থা ‘ড্রামাডোল’ নতুন প্রযোজনা ‘রেখেছো বাঙালি করে’ পরিবেশন করল বালুরঘাটের নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের অন্তরঙ্গ মঞ্চে, ব্ল্যাক বক্স থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলার নাট্যকার্বণ’ উৎসবের অংশ ছিল।

নাটকটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানসিকতা ও পরিচয়ের সংকট। অম্বরিশ সরকারের মূল বক্তব্য ছিল, বাঙালি যেন একটি ডাইনোসরে পরিণত হচ্ছে—সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, পরিচয় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তবে এই সংকটের মধ্যে থেকেও নতুন করে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়। ‘ড্রামাডোলে’র এই প্রযোজনায় অম্বরিশ সরকার এককভাবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলেও, রোহন চক্রবর্তী, অয়ন মজুমদার, নান্টু সরকার ও নিহার বিশ্বাস তাঁদের অভিনয়ে নিখুঁত সহায়তা দিয়েছেন।

নাটকের শেষে অম্বরিশ সরকার বলেন, ‘নাটক হলো সমাজের আয়না। আমরা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরি এবং মানুষকে ভাবতে বাধ্য করি। আজকের নাটক সেই কাজটিই করেছে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা শাসক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। নাটক শেষে দর্শকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে চর্চার ঢেউ ওঠে। ‘ড্রামাডোলে’র এই অভিনব পরিবেশনা নাট্যপ্রেমীদের মধ্যে গভীর ছাপ ফেলে দেয়।

প্রসঙ্গত, সমাজে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘নাটক’ শব্দটি শুনলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে এমন একটি চিত্র, যেখানে ফুটে ওঠে সমাজের চিত্র, বাস্তবতা ও গল্প। নাটক আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের বিশাল স্থান দখল করে আছে। এর সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।আমরা জানি প্রাচীন ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভাষা আন্দোলন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে জনসমর্থন তৈরি করে জনতাকে জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে মঞ্চস্থ হওয়া যাত্রাপালা এবং নাটক বড় ভূমিকা রেখেছে। শুধু তাই নয় মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধ তৈরিতে নাটকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।