মৌমিতা সানা, হাওড়াঃ শীত পড়লেও সাঁতরাগাছি ঝিলে দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের! ঝিল সংস্কার না হওয়াতে আসছে পরিযায়ী পাখি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সাঁতরাগাছি স্টেশনের পাশেই রয়েছে ১৩ একরের সুবিশাল জলাশয়। এই ঝিলটি সাঁতরাগাছি পাখিরালয় নামে পরিচিত। কারণ শীতের শুরুতেই এখানে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখির দল। হিমালয়ের পাদদেশ এমনকি সুদূর সাইবেরিয়া থেকেও পাখির দল প্রতিবছর উড়ে আসে এখানে।
যা দেখতে ভিড় জমান বহু পক্ষীপ্রেমী মানুষ। ক্যামেরা বন্দি করেন পাখিদের ছবি। পাখিদের কলকাকলিতে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয় সাঁতরাগাছির ঝিলে। কিন্তু এবছর এখনও সেই পাখিদের দেখা নেই! কারণ হিসেবে স্থানীয়রা মনে করছেন, ঝিল ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়ার কারনেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পাখিরা। তাঁরা জানান, পুজোর পরেই ঝিল পরিষ্কার করে পাখিদের নিরাপদ আস্তানা গড়ে দেওয়া হয় ঝিলে। এবছর সেখানে সেই কাজ হয়নি। ঝিলের জল ঢেকে রয়েছে কচুরিপানায়। তার ওপরে এলাকার নোংরা জল গিয়ে মিশছে জলে। লোহার জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল ঝিল। সেই বেড়া ভেঙে গিয়েছে।
নোংরা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ঝিলে। সবমিলিয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এলাকার মানুষজন জানান অবিলম্বে এই ঝিলের প্রতি নজর দিক প্রশাসন। তা না হলে, এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যকোথাও চলে যাবে পরিযায়ী পাখির দল। মাঝে বেশ কয়েক বছর আগে একবার এই ঝিল সংস্কারের ফলে পাখিদের আসা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, এই ঝিলে যে বাস্তুতন্ত্র রয়েছে তা এই সংস্কারের ফলে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আবার কোভিডের সময় পাখিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাওড়ার পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী জানান, ‘ঝিলটি রেলের। সংলগ্ন এলাকা পুরসভার। তাই রেলের সঙ্গে কথা বলে ঝিলটির সংস্কার করে পাখিদের অনুকূল পরিবেশ যাতে তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরেই সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখিদের আসা কমে গেছে। কারণ এই ঝিল লাগোয়া ব্রিজ ও স্টেশনে যে কাজ হচ্ছে তার বিভিন্ন বর্জ পদার্থ ক্রমাগত ফেলা হচ্ছে ওই ঝিলের জলে।
যার ফলে ঝিলের একাংশ হারিয়ে ফেলছে তার পুরনো রূপ। এর ওপরে এই কাজের জন্য যে শব্দ দূষণ হচ্ছে তাতেও ভয় পাচ্ছে পাখিরা। পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে গিয়ে দূষণের জেরেই এই ঝিল থেকে মুখ ফরিরিয়ে নিচ্ছে পাখির দল। যা একটি দুঃখজনক ঘটনা তো বটেই পরিবেশের ওপরেও এ্ কুপ্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।