পুনর্মিলন উৎসবে রেহেনাই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মকে

জেলা রাজ্য শিক্ষা সংস্কৃতি

মৃণাল কান্তি সরকার, শান্তিনিকেতন:– ছোট থেকেই ওর বিচক্ষণতা প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধরা পড়ে। যদিও প্রাথমিক পড়াশোনাটা হয়েছিল নিজের বাড়ির পাশেই একটা ছোট্ট ইস্কুলে। তবে ওখানে পড়তে পড়তেই মনের মধ্যে স্বপ্ন আঁকতে শুরু করে সেদিনের সেই ছোট্ট রেহেনা পারভীন। তাঁর চোখে স্বপ্ন ছিল পাঠভবনে পড়ে জীবনে একটা উঁচু জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। বয়সটা একেবারেই অল্প তবুও অদম্য জেদ ভাবনা চিন্তা এবং চেতনা তাঁকে সর্বদাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সামনের দিকে। কেবলমাত্র পাঠভবনে পড়াই নয় কিভাবে নিজের জীবনকে এই মানুষ তৈরীর কারখানায় সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজের মূল্যায়ন করে একজন সঠিক মানুষ হওয়া যায় সেই স্বপ্ন দেখে রেহেনা আজও। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয় এই রেহেনা পাঠভবনে। তখন থেকেই তিল তিল করে নিজেকে এই পর্যায়ে গড়ে নিয়ে এগিয়ে চলেছে যেখানে যেকোনো ধরনের সমস্যার সামনে পড়লে কি করে তাকে এক নিমেষে সমাধান করা যায় তা এই বয়সেই রীতিমতো ব্রক্ত করে নিয়েছে সেদিনের সেই ছোট্ট রেহেনা পড়ভিন। ২০২৪ সালে পাঠভবন অর্থাৎ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির আসল জায়গা সেখানে যে পুনর্মিলন উৎসব হচ্ছে এবার সেই উৎসবের মূল সম্পাদিকা একাদশ শ্রেণীর এই রেহেনা। অর্থাৎ কিনা মাত্র ১৭ বছর বয়সেই এতো গুরু দায়িত্ব নিশ্চয়ই তাঁর কৃতিত্বের জন্যই আজ কর্তৃপক্ষ তাঁর ওপরেই সমর্পণ করেছে। পুনর্মিলন উৎসবের এক ফাঁকে সে বলেই ফেলল, “যখন এখানে প্রথম ভর্তি হয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম পুনর্মিলন উৎসব, যদিও তখন তার কোন মানেই বুঝতে পারিনি আর আজ প্রতিটা মুহূর্তে বুঝতে পারছে, কেন এই পুনর্মিলন উৎসব কেন এই শান্তিনিকেতন কেন এই পাঠভবন। একজন মানুষ তার সারা জীবনের সবকিছু দিয়ে কেন এই মানুষ তৈরীর কারখানা করেছিলেন তা আজ খুব ভালো করে বুঝতে পারছি”। শেষ ছয় মাস ধরে একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে স্কুলের কাজকর্ম পাশাপাশি এই পুনর্মিলন উৎসবের এত বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সবকিছু কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় নিজের বুদ্ধি দিয়ে এত ছোট বয়সে কি করে করতে হয় তা কিন্তু দেখিয়ে দিচ্ছে শান্তিনিকেতনের পাশেই জামবনির বাসিন্দা রেহেনা পারভীন। যা দেখে আগত সমস্ত প্রাক্তনীরাই রীতিমতো হতবাক। বর্তমানে রেহেনা একাদশ শ্রেণীতে পড়ে বিজ্ঞান বিভাগে। এরপর তার চিন্তা স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে স্নাতক পর্যায় পড়াশোনা করবে আর তারপর ডাটা এনালাইসিস নিয়ে পড়াশোনা করে দেশের মুখ গৌরবজ্জ্বল করবে। এই ছোট্ট বয়সে এসে এত উচ্চমানের আধুনিকতম চিন্তাভাবনা সাম্প্রতিককালে হয়তো চট করে কারুর চোখে ধরা পড়বে না। তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেই সে কিন্তু চলে যেতে চায় বি এইচ ইউ অথবা জে এন ইউ তে, খুব স্বাভাবিকভাবেই এইটুকুতেই বোঝা যায় এখন থেকেই এই ছোট্ট রেহানার কি ধারনা ভবিষ্যৎকে নিয়ে। একদিকে যেমন পাঠভবনে পড়ার শুবাদে রীতিমত রপ্ত করে ফেলেছে নাচ গান ছবি আঁকা থেকে শুরু করে আবৃত্তি থেকে শুরু করে সবকিছুই। রেহেনা স্বপ্ন দেখে আগামী দিনে সামনের দিকে আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে হবে যেখান থেকে তাঁর কার্যক্রম যেন সে নিজেই ছড়িয়ে দিতে পারে আপামর মানুষের মধ্যে। পুনর্মিলন উৎসবে এসে সকলেই যখন মেতে উঠেছেন একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ে তখন এই ছোট্ট রেহেনা সেও কিন্তু সকলের সঙ্গে একসঙ্গে মিলেমিশে একদিকে যেমন কাজ করে চলেছে অন্যদিকে নিজের ভাব বিনিময়ের মধ্যে দিয়েই বুঝিয়ে দিচ্ছে আগামী দিনে সে কোন পর্যায়ে যেতে চলেছে এই পাথর ভবন থেকে সুদূর প্রান্তে।