নিউজ পোল ব্যুরো: বর্তমান সময়ে অনলাইনে খাবার অর্ডার করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অংশ হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই খাবারগুলি সাদা বা কালো রঙের প্লাস্টিকের এয়ারটাইট কনটেইনারে পরিবেশন করা হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে এই কনটেইনারগুলি জমিয়ে রাখার প্রবণতা একপ্রকার মহামারির রূপ নিয়েছে। এই প্লাস্টিক কনটেইনারগুলি বারবার ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী বলে মনে করা হয়। খাবার সংরক্ষণ থেকে শুরু করে মাইক্রোওভেনে খাবার গরম করা পর্যন্ত, এগুলি বহুমুখী ব্যবহারে সক্ষম। অনেকে মনে করেন, এগুলি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব আচরণ বজায় রাখা সম্ভব। তাই বাড়িতে এই বাক্সগুলি জমিয়ে রাখার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। তবে, এই কনটেইনারগুলির পুনর্ব্যবহার আদৌ কতটা নিরাপদ তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই দাবি করছেন, এই ধরনের প্লাস্টিক কনটেইনার পুনর্ব্যবহার করা উচিত নয়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কালো প্লাস্টিকের কনটেইনার, খাবারের ট্রে, পাত্র এবং বাসন তৈরিতে এক বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। এই প্লাস্টিক মূলত পুরোনো ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়। কালো প্লাস্টিকের কনটেইনার তৈরি করতে পুরোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের মতো উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হয়। এতে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলির মধ্যে অন্যতম হলো decaBDE। এই রাসায়নিকটি মূলত প্লাস্টিককে তাপ-সহনশীল এবং মজবুত করতে ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোওভেনে ব্যবহারের জন্য এই ধরনের পাত্রকে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। তৈলাক্ত এবং অ্যাসিডিক খাবার এই বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ এই ধরনের খাবার রাসায়নিক পদার্থকে দ্রুত শোষণ করে। ফলে, নিয়মিত এই ধরনের পাত্রে খাবার গরম করলে বা সংরক্ষণ করলে তা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কেমোস্ফিয়ারের বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে কালো প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গুরুতর সতর্কতা প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাটি ২০৩টি ভোগ্যপণ্যের বিশ্লেষণ করেছে, যেগুলি কালো প্লাস্টিকের বাটিতে রাখা হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, সেগুলির ৮৫ শতাংশের মধ্যে বিষাক্ত শিখা-প্রতিরোধী রাসায়নিক উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের রাসায়নিকগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে, এবং বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, কালো প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানোর জন্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, একাধিক ব্যবহারের পর কালো প্লাস্টিকের কনটেইনার থেকে DecaBDE এবং অনুরূপ যৌগগুলি নির্গত হতে পারে, যেগুলি কার্সিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী) এবং এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার (হরমোন সিস্টেমে হস্তক্ষেপকারী) হিসেবে কাজ করে। যদিও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এই রাসায়নিকগুলি থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েই যায় বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।
এছাড়া, কালো প্লাস্টিকের মধ্যে উপস্থিত বিসফেনল এ (বিপিএ) এবং থ্যালেটস নামক পদার্থগুলি মানুষের কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস এবং প্রজননজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্ত তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে জানা যে, কালো প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে এবং এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও সতর্কতা প্রয়োজন।