নিউজ পোল ব্যুরো: ভারত বরাবরই তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এই দেশের প্রতিটি প্রান্তেই বাস করে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও উপজাতি, যাঁদের নিজস্ব শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত। লোকচিত্রশিল্প এই ঐতিহ্যের একটি অন্যতম দিক। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরণের লোকচিত্রশিল্প প্রচলিত, যা শুধু শিল্পকলার রূপই নয়, বরং সেই অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা, বিশ্বাস ও কাহিনীর প্রতিচ্ছবি।
মধুবনী পেইন্টিং মিথিলা আর্ট নামেও পরিচিত। এটি ভারতের বিহার রাজ্যের মধুবনীর জেলাও উদ্ভূত একটি প্রাচীন চিত্রশিল্প। এই শিল্পের নামকরণ করা হয়েছে মধুবনী জেলার নামানুসারে। মূলত গ্রামীণ মহিলারা এই চিত্রকর্ম তৈরি করেন এবং এটি তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও জীবিকার অন্যতম উৎস। মধুবনী পেইন্টিং মূলত প্রাকৃতিক রঙ ও তুলির সাহায্যে কাগজ, কাপড় বা দেওয়ালে আঁকা হয়। এটি সাধারণত দেবদেবী, প্রকৃতি ও পৌরাণিক কাহিনীর দৃশ্যাবলী তুলে ধরে।
পাশাপাশি রাজস্থানের নান্দনিক সৌন্দর্য্য রাজস্থানের মিনিয়েচার পেইন্টিং যা ভারতীয় শিল্পকলার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই ক্ষুদ্র চিত্রকর্মগুলো সাধারনত লাল, নীল কালো এবং বিভিন্ন গাঢ় রঙের সাহায্যে ফ্যাব্রিক বা ক্যানভাসে আঁকা হয়। এই চিত্রশিল্পী রাজস্থানের সংস্কৃতি, পরাণিক কাহিনী এবং ঋতুগুলোর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলা হয়। সূক্ষ্ম নকশা এবং রঙের নিখুঁত ব্যবহার এই শিল্পকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলার পটচিত্র, যা মূলত বস্ত্রের উপর আঁকা হয়, প্রাচীন বাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রাচীনকালে যখন নির্দিষ্ট শিল্পকলা গড়ে ওঠেনি, তখন পটচিত্রই বাংলার শিল্পকলার মূল বাহক ছিল। এই চিত্রশিল্পে সাধারণত পৌরাণিক কাহিনী, গ্রামীণ জীবন এবং সামাজিক বার্তা ফুটিয়ে তোলা হয়। এটি বাংলার শিল্পীর সৃজনশীলতার একটি অপূর্ব উদাহরণ।
তাঞ্জোর পেইন্টিং তামিলনাড়ুর একটি বিখ্যাত চিত্রশিল্প, যা স্থানীয়ভাবে ‘পালাগাই পদম’ নামেও পরিচিত। এটি শক্ত কাঠের তক্তায় তৈরি করা হয়। এই চিত্রশিল্পের প্রধান থিম হলো হিন্দু দেবদেবী ও সাধুরা। তাঞ্জোর পেইন্টিংয়ে সোনার পাত ও উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার একে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেয়। এটি তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ।
ওয়ার্লি আর্ট মহারাষ্ট্রের ওয়ারলি উপজাতিদের দ্বারা সৃষ্ট একটি ঐতিহ্যবাহী লোকচিত্র। এটি সাধারণত দেয়াল ও মাটির ঘরের উপর আঁকা হয়। এই চিত্রশিল্পে উপজাতিদের জীবনধারা, উৎসব ও দৈনন্দিন কাজকর্মকে সরল রেখাচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। এটি ভারতের গ্রামীণ জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।
গন্ড আর্ট মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত একটি শিল্পরীতি। প্রাচীনকালে গন্ড সম্প্রদায়ের মানুষেরা বানা নামক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তুলে ধরতেন। গন্ড চিত্রশিল্পে সাধারণত প্রকৃতি, জীবজন্তু এবং পৌরাণিক কাহিনীগুলির রঙিন ও সূক্ষ্ম চিত্রায়ণ দেখা যায়।
ভারতের লোকচিত্রশিল্প শুধু শিল্পকলার উদাহরণ নয়, বরং এটি প্রতিটি অঞ্চলের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যকেও ধারণ করে। এই চিত্রশিল্পগুলি শুধুমাত্র ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, বরং বহু গ্রামীণ শিল্পীর জীবিকার অন্যতম মাধ্যম।