নিউজপোল ব্যুরো: বাঙালিরা ব্যবসা বোঝেনা বলতে শোনা যায় অনেককেই। কিন্তু এই বাঙালির ব্যবসায়ী যখন বিশ্বের দরবারে বিশেষ নজির গড়েন তখনই আবার উল্টো সুর চরান অনেকে। এমনই এক বাংলার ব্যবসায়ী গোটা বিশ্বের রমরমে চলছে বহুকাল। ইংরেজ আমলের সেই ব্যবসা বর্তমানে ১০০ বছরের দোড়গোড়ায়। যাকে চোখ বোঝালে বিশ্বাস করেন আপনিও, জানেন সেই সংস্থাকে? যাতে বরাবরই বাঙালির ভরসা?
‘শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বোরোলীনই ভরসা’ – এই নিয়ম যুগ যুগ ধরে চলছে। উত্তরে হওয়ার কনকনে আমেজ নিয়ে বাংলায় ঢুকে পড়েছে শীত। শীত এলেই রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে যার কথা সবথেকে মনে পরে তা হলো বোরোলিন। এই ক্রিমকে ঘিরে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। অ্যারোমেটিক ও অ্যান্টিসেপ্টিক একটি ক্রিম হলো বোরোলিন। এটি এমন একটি ক্রিম যা শুধুমাত্র বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার হয় তা নয় ফার্স্ট এইড বক্সে এর উপস্থিতি সবসময় লক্ষ করা যায়।
বাঙালির প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে এই বোরোলিন দেখা যায়।ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য আবিষ্কার হয়েছিল এই ক্রিম। কিন্তু এই বোরোলিন একজন বাঙালি আবিষ্কার করেছিল সেই ব্যাপারে হয়ত অনেকেই জানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বোরোলিন আবিষ্কারের পেছনে থাকা রহস্যময় ইতিহাস।
সাল ১৯২৯, বাংলায় শুরু হলো এক নতুন আন্দোলন, তবে এই আন্দোলনের অস্ত্র কার্তুজ বা বোমা ছিল না। বিদেশি পণ্য পুড়িয়ে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার শুরু হয়। বিদেশী বাজারে দেশীয় পণ্যের পথ চলা। দেহে পুড়ে গেলে বা কোনো ক্ষত হলে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করতো। কারণ বিদেশি ওষুধ বা ক্রিম কেনাটা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। দেশের মানুষের কথা ভেবে বাঙালি ব্যবসায়ী গৌর মোহন দত্ত একটি অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম তৈরী করার কথা ভাবেন, যা প্রত্যেকটি ভারতীয় সহজেই ক্রয় করতে পারবে।
গৌড় মোহন দত্ত ছিলেন বিদেশি পণ্যের আমদানিকারক। কিন্তু একটা সময় পর তিনি বুঝতে পারেন নিজের দেশকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা দরকার। তাই তিনি এমন পণ্য তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা বিদেশি পণ্যকে টক্কর দেবে। কিন্তু এই কাজ মোটেও সহজ ছিল। অনেকেই তাঁর কাজের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ভারতকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য তিনি নিজের উদ্যোগে তাঁর উত্তর কলকাতার বাড়িতে বোরোলিন মজুত করে রাখতেন। এখন সেই বাড়িটি ‘দ্য বোরোলিন হাউস’ নামে পরিচিত। ১৯২৯ সালে সবুজ টিউবে বোরোলিন বাজারে আসে। এটি ছিল সম্পূর্ণ ভেষজ উপায়ে তৈরী কিন্তু বিদেশি পণ্য টেক্কা দিতো।
প্রথমে ইংরেজরা অনেক চেষ্টা করেছিল এটি বন্ধ করার জন্য কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। বোরোলিন উপাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির নাম জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল, তাদের দুটি কারখানা একটি কলকাতা ও অপরটি গাজিয়াবাদে। বর্তমানে বোরোলিনের মালিক গৌড় মোহন দত্তের নাতি দেবাশিসদত্ত।
বোরোলিন শব্দের প্রথম অংশটি হলো ‘বোরো’ যা বোরিক পাউডার থেকে এসেছে ও দ্বিতীয় অংশটি হল ‘ওলিন’, এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার মানে তেল। আমরা জানি বোরো কোম্পানিগুলি তাঁদের ফর্মুলা সবসময় গোপন রাখে যাতে অন্য কেউ কপি করতে না পারে। কিন্তু গৌড় মোহন দত্তের জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস বোরোলিন তৈরির ফর্মুলা কখনও গোপন রাখেনি। তাদের আন্টিসেপ্টিক ক্রিম তৈরী করতে আন্টিসেপ্টিক বোরিক এসিড, অস্ট্রিঞ্জেন্ট ও সানক্রিম জিঙ্ক অক্সাইড এবং ইমোলিয়েন্ট ল্যানোলিন ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার জন্য তারা পুরোনো টিউব রিসাইকেল করে নতুন টিউব তৈরী করে। ১৯৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন তিনি ১ লক্ষ জনগণকে বোরোলিন বিতরণ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন। কোনো বিপণন ব্যবস্থা ছাড়াই এর নিজস্ব পরিচয় তৈরী করেছিল। সেই সময় বিজ্ঞাপনের যুগ ছিল না। তাসত্ত্বেও বোরোলিন বাঙালির মনে এক আলাদা জায়গা তৈরী করে নিয়েছিল। খুব শীঘ্রই এটি সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় ক্রীম হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার আগে কাশ্মীরিরা শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পেতে এবং দক্ষিণ ভারতের মানুষ সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে বোরোলিন ব্যবহার করতো। বোরোলিন জনপ্রিয়তার খবর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও অভিনেতা রাজ্ কুমারের কাছে এলে তাঁরা ব্যবহার করতে শুরু করেন।
জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস বোরোলিন ছাড়াও বর্তমানে সুথল, এলিন, গ্লো সফ্ট ইত্যাদি। ১০০ বছরের দোরগোড়ায় এই ক্রিমের জনপ্রিয়তা সমানভাবে বজায় রয়েছে। অনেকেই বলতে সোনা যায় বাঙালিরা নাকি ব্যবসা বোজে না, কিন্তু তার প্রত্যুত্তর দিয়েছেন বাঙালি ব্যবসায়ী গৌর মোহন দত্ত। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখনো পর্যন্ত বাঙালির হৃদয়ে বিরাজমান।
বাঙালির প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে এই বোরোলিন দেখা যায়।ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য আবিষ্কার হয়েছিল এই ক্রিম। কিন্তু এই বোরোলিন একজন বাঙালি আবিষ্কার করেছিল সেই ব্যাপারে হয়ত অনেকেই জানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বোরোলিন আবিষ্কারের পেছনে
সাল ১৯২৯, বাংলায় শুরু হলো এক নতুন আন্দোলন, তবে এই আন্দোলনের অস্ত্র কার্তুজ বা বোমা ছিল না। বিদেশি পণ্য পুড়িয়ে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার শুরু হয়। বিদেশী বাজারে দেশীয় পণ্যের পথ চলা। দেহে পুড়ে গেলে বা কোনো ক্ষত হলে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করতো। কারণ বিদেশি ওষুধ বা ক্রিম কেনাটা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। দেশের মানুষের কথা ভেবে বাঙালি ব্যবসায়ী গৌর মোহন দত্ত একটি অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম তৈরী করার কথা ভাবেন, যা প্রত্যেকটি ভারতীয় সহজেই ক্রয় করতে পারবে।
গৌর মোহন দত্ত ছিলেন বিদেশি পণ্যের আমদানিকারক। কিন্তু একটা সময় পর তিনি বুঝতে পারেন নিজের দেশকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা দরকার। তাই তিনি এমন পণ্য তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা বিদেশি পণ্যকে টক্কর দেবে। কিন্তু এই কাজ মোটেও সহজ ছিল। অনেকেই তাঁর কাজের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ভারতকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য তিনি নিজের উদ্যোগে তাঁর উত্তর কলকাতার বাড়িতে বোরোলিন মজুত করে রাখতেন। এখন সেই বাড়িটি ‘দ্য বোরোলিন হাউস’ নামে পরিচিত। ১৯২৯ সালে সবুজ টিউবে বোরোলিন বাজারে আসে। এটি ছিল সম্পূর্ণ ভেষজ উপায়ে তৈরী কিন্তু বিদেশি পণ্য টেক্কা দিতো।
প্রথমে ইংরেজরা অনেক চেষ্টা করেছিল এটি বন্ধ করার জন্য কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। বোরোলিন উপাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির নাম জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল, তাদের দুটি কারখানা একটি কলকাতা ও অপরটি গাজিয়াবাদে। বর্তমানে বোরোলিনের মালিক গৌর মোহন দত্তের নাতি দেবাশিস দত্ত।
বোরোলিন শব্দের প্রথম অংশটি হলো ‘বোরো’ যা বোরিক পাউডার থেকে এসেছে ও দ্বিতীয় অংশটি হল ‘ওলিন’, এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার মানে তেল। আমরা জানি বোরো কোম্পানিগুলি তাঁদের ফর্মুলা সবসময় গোপন রাখে যাতে অন্য কেউ কপি করতে না পারে। কিন্তু গৌর মোহন দত্তের জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস বোরোলিন তৈরির ফর্মুলা কখনও গোপন রাখেনি। তাদের অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম তৈরী করতে অ্যান্টিসেপটিক বোরিক এসিড, অ্যাসট্রিনজেন্ট ও সানক্রিম জিঙ্ক অক্সাইড এবং ইমোলিয়েন্ট ল্যানোলিন ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার জন্য তারা পুরোনো টিউব রিসাইক্যাল করে নতুন টিউব তৈরী করে। ১৯৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন তিনি ১ লক্ষ জনগণকে বোরোলিন বিতরণ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন। কোনো বিপণন ব্যবস্থা ছাড়াই এর নিজস্ব পরিচয় তৈরী করেছিল। সেই সময় বিজ্ঞাপনের যুগ ছিল না। তা সত্ত্বেও বোরোলিন বাঙালির মনে এক আলাদা জায়গা তৈরী করে নিয়েছিল। খুব শীঘ্রই এটি সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় ক্রিম হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার আগে কাশ্মীরিরা শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পেতে এবং দক্ষিণ ভারতের মানুষ সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে বোরোলিন ব্যবহার করতো। বোরোলিন জনপ্রিয়তার খবর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও অভিনেতা রাজ কুমারের কাছে এলে তাঁরা ব্যবহার করতে শুরু করেন।
জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস বোরোলিন ছাড়াও বর্তমানে সুথল, এলিন, গ্লো সফ্ট ইত্যাদি। ১০০ বছরের দোরগোড়ায় এই ক্রিমের জনপ্রিয়তা সমানভাবে বজায় রয়েছে। অনেকেই বলতে সোনা যায় বাঙালিরা নাকি ব্যবসা বোঝে না, কিন্তু তার প্রত্যুত্তর দিয়েছেন বাঙালি ব্যবসায়ী গৌর মোহন দত্ত। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখনো পর্যন্ত বাঙালির হৃদয়ে বিরাজমান।