বিকাশ পাঁজি: দীর্ঘ ফুটবল কেরিয়ারে আমায় অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। শনিবার ইস্ট বেঙ্গল বনাম জামশেদপুর ম্যাচটা দেখতে দেখতে সেসবই মনে পড়ছিল। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবনে ব্যাডপ্যাচ চলে। তখন কোনওকিছুই ঠিক হয় না। তবে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পারফরম্যান্সই শেষ কথা। শনিবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জিততেই পারত ইস্ট বেঙ্গল। তবে একের পর এক সুযোগ নষ্টের খেসারত হিসেবে পাল্টা দু’গোল হজম করে খালি হাতেই ফিরতে হল ক্লেটন-নন্দদের। তবে সব খারাপের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিক থাকে। এই ম্যাচেও ছিল। সবার আগেই কোচ বিনো জর্জের প্রশংসা করতে হবে। কার্লেস কুয়াদ্রাত ছেড়ে যাওয়ার পর হঠাৎই দায়িত্ব নিয়ে দলকে এক সুতোয় বাধার চেষ্টা করেছে। ম্যাচের ফলে তার প্রভাব না পড়লেও আগামীদিনে অবশ্যই এই পারফরম্যান্স ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। সামনে মর্যাদার ডার্বি। ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই বার্তা, ‘তোমরা ভয় পেও না। একটা জয় গোটা পরিস্থিতি বদলে দেবে। আর ডার্বির চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কিছু হতে পারে না।’
মনে আছে, ১৯৮৮ সালে এমনই এক বড় ম্যাচের আগে আমাদের দলের বেশিরভাগ ফুটবলার তখন জাতীয় শিবিরে। ফলে সকলেই ধরে নিয়েছিল, সহজেই জিতে যাবে মোহন বাগান। তবে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দু’গোলে জিতেছিলাম আমরা। সুতরাং, ডার্বির আগে অতীতের ফল কোনও গুরুত্ব রাখে না। আমি চাইব, ১৯ তারিখের ডার্বি থেকেই ঘুরে দাঁড়াক ইস্ট বেঙ্গল। তারজন্য ফুটবলারদের বাড়তি তাগিদ দেখাতে হবে। ক্লেটনের বয়স বাড়ছে। একইসঙ্গে একেবারে ছন্দে নেই এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। তবে ভুলে গেলে চলবে না, ও দলের অধিনায়ক। তাই ওকে সবার আগে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমার বিশ্বাস, ও পারবে।
চোট ফুটবলের অঙ্গ। তবে খেলোয়াড়ি জীবনে কখনও তা অজুহাত হিসেবে ঢাল করিনি। দলের স্বার্থে অনেক সময় চোট নিয়েই খেলতে হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি, কোনও ফুটবলারের একটু চোট থাকলেই কোচেরা তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেন না। হয়তো তাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। নিশু ফিরলে সাইড-ব্যাকের সমস্যা অনেকটাই মিটবে। তবে এই দলে আরও একজন ভালোমানের উইং-ব্যাকের দরকার।
মনে রাখতে হবে, কোচ কিংবা কর্তারা শুধুই বাইরে থেকে সাহায্য করতে পারেন। মাঠে নেমে কিন্তু ফুটবলারদের খেলতে হবে। এবার ইস্ট বেঙ্গল দল যথেষ্ট ভালো হয়েছে। কোনও অভিযোগের জায়গা থাকার কথা নয়। তারপরেও দলের এই হতশ্রী পারফরম্যান্স সত্যিই হতাশার। এখান থেকে ফুটবলারদেরই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।