বাঙালির বিপদ বাড়াচ্ছে কোন দুই হার্টের অসুখ?  সাবধান করোনারি আর্টারি ডিজিজে!

স্বাস্থ্য

দেশের মানুষের এবং বাঙালিদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বাড়ছে। আর তার অন্যতম কারণ হল, বিদেশের মানুষের তুলনায় আমাদের দেশের নাগরিকদের দৈহিক উচ্চতা অনেকখানি কম। ফলে করোনারি আর্টারির দৈর্ঘ্যও কম। তাই একদিকে ছোট আর্টারি, তার উপর আবার এদেশে ধূমপান, তামাক সেবনের প্রবণতা অনেক বেশি। তামাক সেবন নানাভাবে করোনারি আর্টারির ক্ষতি করে। এতদিন জানা ছিল করোনারি আর্টারি ডিজিজ সাধারণত স্থূলকায় ব্যক্তির মধ্যে বেশি হয়। তবে দেখা গিয়েছে এদেশে হালকা চেহারার লোকেরাও হার্টের সমস্যা আক্রান্ত হতে পারেন। আর তার পিছনে মূল কারণ হল ধূমপানের অভ্যেস করেন। ধূমপান ছাড়াও আরও একটি বড় কারণ হল ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসে ভোগা লোকের সংখ্যাও এখন গিয়েছে বেড়ে। জানা যাচ্ছে আর কয়েকবছরের মধ্যেই বেশিরভাগ ভারতীয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। ডায়াবেটিস রক্তবাহী নালীগুলির ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীরের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির কার্যকারিতাতেও তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা। ফলে অকালেই দেখা দেয় কিডনির অসুখ এবং বাড়তে থাকে ব্লাড প্রেশারের আশঙ্কা।  
হার্টের রোগ হওয়ার নেপথ্যে আরও একটা বড় কারণ হল স্ট্রেস বা উদ্বেগপূর্ণ জীবনযাপন। আজকাল কমবয়সি ছেলে মেয়েদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধির পিছনে বড় কারণ হল চাকরি-বাকরির অভাব। আবার কাজ পাওয়ার পরেও হচ্ছে না সমাধান। বেসরকারি জায়াগায় কাজ হারানোর ভয় এবং  কর্মস্থলে নানা ধরনের জটিলতা, অফিস পলিটিক্স এবং তার সঙ্গে উপরে ওঠার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হয়ে জীবনে বেড়েই চলেছে উদ্বেগের মাত্রা। এখানেই শেষ নয়। উদ্বেগ কাটাতে অনেকেই রাত জেগে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখছেন সিনেমা। ঘুমের অভাবও জীবনে স্ট্রেসের মাত্রা বাড়ায়!
এখানেই শেষ নয়। সোশ্যাল মিডিয়াও মানুষকে ঠেলে দিচেছ এক অসম লড়াইয়ে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার দীর্ঘসময়ে কাটানো এবং অন্যের জীবনযাপনের কেতা দেখে নিজেকে তাদের সঙ্গে তুলনা করার অভ্যেস বাড়িয়ে তুলছে মানসিক অশান্তি। এই অশান্তিই রূপ নিচ্ছে স্ট্রেসের। তাই স্ট্রেস কমাতে প্রতিদিন ১০ মিনিট ধ্যান করুন।
হার্টের রোগের পিছনে আর একটা বড় সমস্যা দায়ী। আর তা হল খাদ্যাভ্যাস। দেখুন, এমনিতেই উদ্বেগপূর্ণ জীবনযাপন কাটাচ্ছেন সকলে। এই উদ্বেগ থেকে দূরে থাকতে বিনোদনের বলতে রয়েছে ওই রেস্তোরাঁ থেকে আনানো খাবার! কেউ কেউ আবার নোনতা বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি হয়ে উঠছেন আসক্ত। খাওয়াদাওয়ার এহেন অভ্যেস অনেকক্ষেত্রেই খুব স্বাস্থ্যকর প্রমাণিত হচ্ছে না। নিয়মিত বিরিয়ানি, ভাজাভুজি, প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার, কেক, পেস্ট্রি বেশিমাত্রায় খাওয়ার অভ্যেসের কারণে অল্প বয়স থেকেই রক্তবাহী নালীতে জমছে প্লাক। যতদিন যাচ্ছে রক্তবাহী নালী হয়ে পড়ছে শক্ত এবং অনমনীয়। এই সমস্যাকে বলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও যায় বেড়ে।
অলসভাবে জীবন কাটালেও রক্তবাহী নালিতে বাড়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা। সেক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের একটা বড় ভূমিকা থাকে। বিশেষ করে পেশির জোর বাড়ায় এমন ওয়ার্কআউট এবং এরোবিক এক্সারসাইজের মেলবন্ধনে ব্যায়াম করলে ফল মিলবে ভালো। যদি ওজন তোলা নাও সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে হন হন করে ৩৫ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং করার মতো এক্সারসাইজ করাই যায়। তাতেও উপকার হবে। 
পারিবারিক ইতিহাসও অত্যন্ত জরুরি বিষয়। কারও যদি পরিবারে কম বয়সে মা কিংবা বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ইতিহাস থাকে, সেক্ষেত্রে ওই পরিবারের সন্তানকেও সতর্ক হতে হবে। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে হার্টের সমস্যা দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
শেষ কথা
কথায় আছে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। অর্থাত্‍ রোগ হওয়ার তুলনায় প্রতিরোধ অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। তাই কুঅভ্যেস ত্যাগ করুন। সুস্থ জীবনযাপন করুন।