নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শুক্রবার ভর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কসবার একটি শপিং মলের সামনে স্কুটিতে চেপে তৃণমূল কাউন্সিলরকে গুলি করতে আসে দুই দুষ্কৃতী। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র কাজ না করায় এ যাত্রারায় রক্ষা পেয়ে যান কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। এরপরেই স্কুটিতে চেপে পালানোর সময় তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। ধৃতের নাম যুবরাজ সিং। তবে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে নানান অসঙ্গতি পূর্ণ কথা বলছে। একবার তার নাম বলে মহম্মদ ইকবাল। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারদের জেরায় উঠে আসছে একের পর এক তথ্য। পুলিশি জেরায় যুবরাজ স্বীকার করে তাদের এলাকার রেইকি করতে সাহায্য করেছে এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। এরপর শুক্রবার তিলজলায় তাদের একটি স্কুটি দেওয়া হয়। বলা হয় সুশান্তকে ভয় দেখাতে হবে। আর পেছনে বাকিরা থাকবে, তারা তাদের কাজ করে চলে যাবে।
যুবরাজের কথা মতো সুশান্ত ঘোষকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় এবার এক ট্যাক্সি চালককে আটক করল কসবা থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ট্যাক্সি চালক একাধিকবার আততায়ীদের ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সুশান্ত ঘোষের ওপর যেভাবে এদিন হামলা চলেছে, তাতে প্রশ্ন ওঠে, এই ঘটনা কি পরিকল্পিত? আগে থেকেই কি পুরোটা জানতেন দুষ্কৃতীরা?
জানা যাচ্ছে, সুশান্ত ঘোষের দু’জন রক্ষী ছিলেন। একজনের শুক্রবার ‘অফ ডে’ ছিল। দ্বিতীয় জন অন্যান্য দিনের মতোই সাতটার সময় সুশান্ত ঘোষের কাছ থেকে ছুটি পেয়ে চলে যান। প্রতিদিন সুশান্ত ঘোষ কাজ না থাকলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের ছুটি দিয়ে দেন। এরপর নিজের বাড়ির সামনে এসে বসেন। তাঁর বাড়ির নীচে ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। সেখানে অনেক বিশিষ্টজনরা সন্ধ্যেবেলায় আসেন। সুশান্ত ঘোষ সেখানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।এলাকার ছেলেদের সঙ্গেও দেখা করেন। সেই সময় নিজের নিরাপত্তারক্ষী তাঁর সঙ্গে রাখেন না।
শুক্রবারই সেই রুটিন মেনেই সান্ধ্য আড্ডায় নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই বসেছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা হচ্ছে, গোটা বিষয়টিই রেইকি করে জেনে নিয়েছে আততায়ীরা। পুলিশের অনুমান, যারা গুলি করতে গিয়েছিল, তারা ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও ওই রাস্তা দিয়ে ঘুরে গেছে। তখন সুশান্ত ঘোষ একা বসে ছিলেন। এরপর যখন তাঁকে মারতে আসে তখন সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে আরও দু’জন বসেছিল। আর সেই কারণে ওই আততায়ী ঘাবড়ে গিয়েই গুলি চালাতে পারেনি?
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, ধৃত ব্যক্তির নাম মহম্মদ ইকবাল। তবে এখন জানা যাচ্ছে, এটা হল ছদ্মনাম। তাঁর আসল নাম যুবরাজ সিং। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় যিনি মূলচক্রী, সে কলকাতা বন্দরের দু’টি জায়গায় আততায়ীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এরপর ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই অভিযুক্তরা এলাকায় রেইকি করেছে বলে মনে করছে পুলিশ। সেই মতো তাঁরা নিজেদের পরিকল্পনা সফল করতেই এসেছিল। এই কাজ করার জন্য মূল চক্রান্তকারী যুবরাজকে ২,৫০০ টাকা অ্যাডভান্স দিয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
অপরদিকে, শুক্রবার ভরসন্ধ্যায় যে ঘটনা ঘটেছে, তারপরেই নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের। সুশান্ত ঘোষ এতদিন কলকাতা পুলিশের তরফে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী পেতেন। শুক্রবার যেভাবে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টা হয়েছে, তারপরে তাঁর নিরাপত্তায় আরও দু’জন নিরাপত্তা কর্মী বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সূত্রের খবর, সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, সুশান্ত ঘোষকে ফোন করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি পাশে আছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমঝোতা হবে না। পুলিশকে বলা হয়েছে, দ্রুত মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে।’ এর পাশাপাশি কসবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সুশান্ত ঘোষ কথা বলেছেন অভিষেকের সঙ্গে।
শুক্রবার ভর সন্ধ্যেয় কসবায় শপিং মলের কাছে কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টার খবর প্রথমে ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, কোনও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। দু’জন দুষ্কৃতী স্কুটিতে চেপে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের পার্টি অফিসের সামনে আসে এবং পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে কাউন্সিলরকে লক্ষ্যে করে গুলি করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই মুহূর্তে সুশান্ত ঘোষের সামনে ফায়ার আর্মস লক হয়ে যায়। গুলি বের না হওয়ায় ভয়ে আবার স্কুলটিতে উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আততায়ী। সেই মুহূর্তে তাকে ধাওয়া করে স্কুটি থেকে টেনে নামিয়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। এমনটাই স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। অপর ব্যক্তি স্কুটি নিয়ে পালিয়ে যায়। তার সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে এই ঘটনার মূল অভিযুক্তের খোঁজে ও তল্লাশি শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দুঁদে অফিসাররা।