বিয়ের নামে জোর করে শারীরিক মিলন অত্যাচার প্রাণনাশের হুমকি, বিচার চান নির্যাতিতা অনামিকা

অপরাধ আইন কলকাতা দেশ রাজ্য

Exclusive: নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার। ছুঁয়েও ফেলেছিলেন তিনি। নামী বিমান সংস্থার এয়ার হোস্টেস হিসেবে নিজের কেরিয়ার তৈরির পথেই সাময়িক ভুলে আচমকাই আকাশ থেকে নেমে এলেন মাটিতে! অন্ধকার কয়েকটি ভয়ঙ্কর দিনের অত্যাচারের জেরে মানসিক শারীরিক উভয় দিক দিয়েই বিপর্যস্ত অনামিকা এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ঘুরে চলেছেন বিচারের আশায়।

অনামিকা(নাম পরিবর্তিত) কলকাতার বাসিন্দা নামী বিমান কোম্পানীর এয়ার হোস্টেস হিসেবে হায়দরাবাদে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই গত বছর ২১অক্টোবর আলাপ হয় বছর ২৯ এর বিবেক তলোয়ার নামে এক যুবকের সঙ্গে। বিবেক হরিয়ানার ছেলে হলেও দীর্ঘদিন তাঁরা হায়দরাবাদে বসবাস করছেন। তাঁদের ফার্নিচারের ব্যবসা। প্রথম আলাপের পর বিবেক অনামিকাকে জানায় তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাঁকে তাঁর ভালো লেগেছে। তাঁরা খুব উচ্চ বংশের। তাঁর প্রত্যুত্তরে অনামিকা তাঁকে জানায় সে তপশিলি সম্প্রদায়ের মেয়ে। তাঁকে কী তাঁর পরিবার মেনে নেবে? তাঁকে আশ্বস্ত করতে জানায় এসব আগেকার দিনে চলতো। এখন এসব কথার কোন মানে হয় না। এরকম মন ভোলানো কথা বলে তাঁকে মায়াচ্ছন্ন করে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় বিবেক। প্রথমে রাজি না থাকলেও আস্তে আস্তে বিবেকের মন ভোলানো কথাবার্তায় তাঁকে বিশ্বাস করে ফেলেন অনামিকা। এরপরেই শুরু হয় তাঁদের মধ্যে মেলামেশা ও কথাবার্তা। এমনকি এরই মধ্যে বিবেকের কথায় বিশ্বাস করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অনামিকার বাবা যিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও মা হায়দরাবাদে যান তাঁদের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে।

এরই মধ্যে বিবেকের আচার আচরণে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন অনামিকা। বিবেক প্রায়ই তাঁকে উত্যক্ত করতো হোটেলে যাওয়ার জন্য এবং তাঁর সঙ্গে শারীরিক মিলনের জন্য। কিন্তু প্রতিবারেই তাঁকে সেই বিষয় থেকে বিরত করার চেষ্টা করে যান অনামিকা। কিন্তু বিবেকের আচার আচরণ ক্রমশঃ পরিবর্তন ঘটে। একদিন জোর করেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে শারীরিক মিলন করেন। এমনকি যে বাড়িতে অনামিকা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন সেখানে এসে থাকতে শুরু করে বিবেক। কোন ওজর আপত্তিই সে শোনেনি। এর পরেই শুরু হয় জাতপাত নিয়ে অত্যাচার। টাকা চাওয়া! না দিলেই শারীরিক অত্যাচার ও অপ্রাকৃতিক পদ্ধতিতে জোর করে শারীরিক মিলন। এমনকি দুর্বল মুহূর্তে তুলে রাখা ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করা। জোর করে তাঁকে মদ্যপান করিয়ে বাধ্য করা হয় এই সব নানান যৌন নির্যাতনে। এরই মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসে জোর করে মদ্যপান করানোর জেরে অনামিকার চাকরিটি চলে যায়। চাকরি চলে যাওয়ার পর অনামিকার ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এমনকি তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করে বিবেক! আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁকে প্রাণে মারার হুমকিও দেয়।

বৃদ্ধ বাবা মা মেয়েকে রক্ষা করতে পারিবারিক এক বন্ধুর শ্মরণাপন্ন হন। তিনি ছুটে যান হায়দরাবাদে। কিন্তু তাতে অত্যাচারের মাত্রা কমেনি। এমনকি নিচু জাত বলে অবজ্ঞা করে অনামিকাকে দিয়ে শৌচাগার পরিস্কার করানোর মতো নানান ঘৃণ্য কাজ করাতে থাকে বিবেক। বিবেকের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অনামিকা প্রাণ নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে আসে। এখানে এসেও মেলেনি নিষ্কৃতি। ফোনে হুমকি দিয়ে ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করা হয়। বাধ্য হয়ে কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হন অনামিকা ও তাঁর পরিবার। কলকাতা পুলিশ তাঁর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তার কপি পাঠায় ঘটনাস্থল তেলেঙ্গানা পুলিশের কাছে। তেলেঙ্গানা পুলিশ অনামিকার কাছে সব শুনে তদন্তে নামে। সাক্ষীদের বয়ানের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয় বিবেক। এখনও সে পুলিশি হেফাজতে। তা সত্বেও তাঁর বন্ধু বান্ধবরা ফোনে সমানে হুমকি দিয়ে চলেছে। তাঁদের বক্তব্য কত টাকা পেলে এই মামলা সে তুলে নেবে!

মিথ্যাচার করে বিয়ের নামে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক মিলন, অত্যাচার, এমনকি তার ভিডিও তুলে রেখে ব্ল্যাকমেল করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকির বিনিময়ে তিনি চান বিচার। টাকা নয়। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার ধীর গতিতে ও এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য দৌড়ে আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন অনামিকা। তাই চাইছেন সাহায্য। কিন্তু তাঁকে বিচার দেবে কে? বিচার ব্যবস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাই বলা যেতেই পারে ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার করে অপরাধীকে কড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক তেলেঙ্গানা পুলিশ। তাতে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবেন নির্যাতিতা অনামিকা। পুরনো এই অতীতের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলোকে দ্রুত ভুলে ফের কাজে ফিরতে চান যে অনামিকা।