নিউজ পোল ডেস্ক, আন্দামান: এই প্রথম ভোটাধিকার পেলেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রাচীন জনগোষ্ঠী জারোয়ারা। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে। যার ফলে এই প্রথম দেশের গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হবেন তাঁরা। যাকে ভারতের গণতান্ত্রিক যাত্রায় ঐতিহাসিক এক মাইলফলক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনের আশা, বাকিরা জারোয়া প্রাপ্তবয়স্কদেরও এর ফলে আগামী দিনে এই ভোটার তালিকায় যুক্ত করা সম্ভব হবে।
আন্দামান বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল অপার সমুদ্রের জলরাশির মধ্যে সবুজ একটি দ্বীপ। যে দ্বীপেই বসবাস করে জারোয়া নামে প্রাচীন এক জনজাতি। যারা এই নব্য আধুনিক সভ্যতাকে পছন্দ করে না। জঙ্গলে নিজেদের জাতিগত ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বহু বছর ধরে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের এই কর্মযজ্ঞে সামিলের চেষ্টা হয়েছে। বহু মানুষ তাঁদের বিষ মাখানো তীরের ঘায়ে জখম পর্যন্ত হয়েছেন। তবুও তাঁদের দেশের মূলধারায় সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে এই সাফল্য।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, যে ১৯ জনের নাম উঠেছে তাঁরা ফর্ম-৬ পূরণ করে বুথ স্তরের আধিকারিকের কাছে তা জমা করেছিলেন। এঁদের মধ্যে প্রথম ফর্মটি গ্রহণ করেন আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসনের মুখ্য সচিব কেশব চন্দ্র। দক্ষিণ আন্দামানের জিরকাটাং অঞ্চলের জারোয়া অধ্যুষিত এক গ্রামে গিয়ে তিনি ওই ফর্মটি জমা নেন।
কেশব পরে এই বিষয়ে জানান, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। জারোয়া-সহ সমস্ত জনজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে সরকারের অঙ্গীকারই এক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, সব ভারতীয় জনজাতির সদস্যদের দেশ গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়ার এই চেষ্টা নতুন নয়। তবে এবার নতুন করেই এই প্রয়াস শুরু হয়েছে। অবশ্যই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের পদ্ধতিকে না প্রভাবিত করে। আর সেই পথেই এবার ভোটার তালিকায় নাম উঠল ১৯ জন জারোয়ার।
দক্ষিণ আন্দামানের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অর্জুন শর্মা জারোয়াদের ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক গোপনীয়তা ও স্পর্শকাতরতাকে সম্মান জানিয়েই পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করেছেন। জারোয়াদের ভোটাধিকার প্রদানের এই প্রক্রিয়াকে সফল করতে আন্দামান আদিম জনজাতি বিকাশ সমিতি এবং জনজাতি উন্নয়ন দফতরের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।