মৌমিতা সানা, হাওড়া: সালটা ১৯৭২। ছেলেটার বয়স তখন মাত্র ১০। খুবই দুষ্টু স্বভাবের ছিল। সঙ্গে ছিল সৎ মায়ের অত্যাচার। পেট ভরা খাবার দিত না সৎ মা। রোগ আর দুষ্টুমির জন্য ছোটবেলাতেই ওর বদরাগি বাবা ছুড়ে ফেলে দিলে কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তাও মুক্তি পায়নি শিশুটি। একদিন চাষের কাজ থেকে ফিরে সৎ মায়ের অভিযোগ শুনে হাতে থাকা কাস্তে দিয়েই সজোরে কোপ মারে বড় ছেলের পিঠে। বয়স তখন মাত্র ৮। তাতেও ওর বাঁদরামি আর কমে না। সৎ ছেলের উৎপাত থেকে বাঁচতে অবশেষে তাঁকে বিক্রি করে দেয় বাবা আর সৎ মা। অবশেষে দিল্লির লালকেল্লার কাছে এক সরকারি হোম ওর ঠিকানা হয়। এখন ওর বয়স ৬২ বছর। ঠিকানা এই রাজ্যের এক সরকারি হোম। হোম কর্তৃপক্ষ হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের কাছে অনুরোধ জানায় ওর বাড়ির খোঁজ করতে। হ্যাম রেডিও, ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস বলেন, আমরা ওর পরিবারের হদিস পাই ওড়িশার সুন্দরগর জেলায়। ভিডিও কল করে কথা বলানো হয়। বেঁচে আছে একমাত্র ভাই ? বিশ্বাসই করতে চাইছেন না পরিবারের কেউই। পরিবারের কেউই কাউকে চিনতে পারছেন না। পরে ভাইয়ের মনে থাকা বাবার সেই কাস্তের কোপ, দাদার পিঠে সেই গভীর কাটা দাগই চেনালো একমাত্র দাদাকে। এ যেন এক রোমাকর্ষক কাহিনী। ৫২ বছর পর একমাত্র দাদাকে পেলেন ভাই। বাড়ি ফেরাবে না কেন?
জানা গিয়েছে, ভাই দাদার ডেড সার্টিফিকেট তুলে বাবার সব স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি ভোগ করছে। ১০০ বিঘার ওপর চাষ জমি। আরও কত কি সবই এখন ভাইয়ের কব্জায়। দাদা এলেই বিপদ। আমরা সুন্দরগড় জেলার জেলাশাসক মনোজ সত্যওয়ান মহাজনকে পুরো বিষয়টি জানিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চাই। উনি দ্রুত স্থানীয় হিমগের থানা ও ব্লকের বিডিও বিশ্বনাথ সাহু হিমগেরকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। জানিয়েছেন কলকাতা থেকে দাদাকে নিয়ে আসতে ভাই দ্রুত রওনা হবে। তাঁদের সঙ্গে বিডিও আর থানার পুলিশ যাবে। এছাড়াও অন্যান্য আইনগত সব সহযোগিতার জন্য জেলাশাসক নির্দেশ দেন। যাতে রাজকুমার ভূুঁইঞার কোনও রকমের অসুবিধা না হয়। বাবার সব অধিকার যেন তিনি পান তাও দেখার ব্যবস্থা করেন জেলাশাসক।