ছেলেকে বাঁচাতে কিডনি দিচ্ছেন টোটো চালক বাবা

রাজ্য স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, তারকেশ্বর: বাবা মানে যার হাত শক্ত করে ধরে রাস্তা পার হওয়া। কঠিন শাসন ও ভালোবাসায় মানুষ হয়ে ওঠা। বলা যেতে পারে বাবা এক বটবৃক্ষর মতো, যে হাজার ঝড়, জল আসলেও আগলে রাখে তাঁর সন্তানদের।

আর ঠিক তেমনি এক ঘটনার নজির সামনে এলো হুগলির তারকেশ্বর ব্লকের ট্যাগরা গ্রামে। ছেলের স্বপ্ন ছিল রেলে চাকরি করার। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানোর। কিন্তু চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি আর নিতে পারেন না তারকেশ্বরের সন্দীপ দে। শরীর আর সঙ্গ দেয় না তাঁর। কারণ তাঁর দু’টো কিডনিই বিকল। এমন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়ালেন স্বয়ং বাবা। জগাই দে তিনি সন্দীপ দে’র পিতা। জানা গিয়েছে, সন্দীপের দু’টি কিডনিই বিকল। আর তারপর থেকেই ছেলেকে বাঁচাতে প্রতিদিন জীবনের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন বাবা। কারণ ছেলের চিকিৎসার জন্য খরচ প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা।

সামান্য টোটো চালিয়ে কী করে এত টাকা জোগাড় হবে তা ভেবেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল সন্দীপের মা – বাবার। এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন দ্রুত বদল করতে হবে তাঁর কিডনি। সামান্য টোটো চালিয়ে যা উপার্জন হয় তাই দিয়েই চলে তাঁদের সংসার। জগাই বাবুর সম্বল বলতে শুধুমাত্র বসত বাড়ি। নেই কোন জমি। মা স্বপ্না দে গৃহবধূ। তাই একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন বাবা-মায়ের। এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলেও ছেলের চিকিৎসা করাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব টাকা। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এরই মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে দু লক্ষ টাকা।

ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল সন্দীপ। দু’চোখে স্বপ্ন ছিল রেলে চাকরি করে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এখন বাবা-মাকেই দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁর পাশে। বছর ২২ এর সন্দীপের জীবনে তাল কাটে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। সকালে ভাত খেয়ে কলেজে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই সময়ই শুরু হয় হঠাৎ বমি! প্রথমে গ্যাস হয়েছে ভেবে ওষুধ খেয়ে কলেজ চলে যায়। দু’দিন ভালো থাকার পরে ফের শুরু হয় বমি। তাঁর বাবা তাঁকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করতে বলেন। তখনই তাঁর কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে মে মাসে ভেলোরে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন তাঁর দু’টো কিডনিই বিকল। বর্তমানে কলকাতার আরএন টেগোর হাসপাতালে সন্দীপের চিকিৎসা চলছে। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিস করতে হয় তাঁকে। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে লাগবে কিডনি, জানিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার। সন্দীপের মা কিডনি দিতে রাজি হলেও কিন্তু তাঁর সুগার থাকায় তিনি দিতে পারবেন না। তাই তাঁর বাবা নিজেই তাঁর একটি কিডনি দিয়ে ছেলেকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চান। আর এই জটিল অস্ত্রোপচার করতে খরচ পড়বে তবে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয় অপারেশনের পর প্রতি মাসে তাঁর ওষুধ লাগবে ৪০ হাজার টাকা। প্রায় তিন মাস চালিয়ে যেতে হবে এই ওষুধ। তাই এত বিপুল পরিমাণে টাকার যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জগাই ও স্বপ্নাকে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১০ ডিসেম্বর কিডনি দান ও প্রতিস্থাপন করা হবে সন্দীপের।

সন্দ্বীপের বাবা মা বলেন, ‘আগে কাঠের কাজ করতাম। কিন্তু ছেলের অসুস্থতার জন্য সেই কাজ ছেড়ে দিই। দিন দিন ছেলের শরীর খারাপ হচ্ছিল। ডাক্তার বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিডনি ট্রান্সফার করতে হবে। এখন আমার কিডনি আমি ছেলেকে দেবো। মুখ্যমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে আবেদন জানিয়েছি। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে ডায়ালিসিস করতেই দু’লাখ টাকা খরচা হয়ে গেছে এখন ৩ লাখ টাকার মত রয়েছে। কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারব।’