নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কড়েয়ায় প্রোমোটার খুনের ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর কেস ডায়েরি তলব হাই কোর্টের। মৃতের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ, এই খুনে আরও অনেকেই জড়িত। রাজ্যের দাবি, এই খুনে অসমের তিনসুকিয়া থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মৃতের স্কুটিটিও উদ্ধার করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি রয়েছে।
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, মৃতের স্ত্রীর যা অভিযোগ, তাতে আগে কেস ডায়েরি দেখতে চায় আদালত। তারপরে ফাইনাল নির্দেশ দেওয়া হবে। নিম্ন আদালতে চলা শুনানি আটকাতে চায় না হাই কোর্ট। তাই আপাতত সেখানে শুনানি চলুক। তবে ২৩ ডিসেম্বর কেস ডায়েরি দেখার পরেই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাই কোর্ট।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় নাগমা বেগমের দাবি, গত ১২ জুলাই তাঁর বাড়িতে তাঁর অনুপস্থিতিতে স্বামীকে খুন করা হয়। তাঁর স্বামীর দেহের আঘাত ও মৃতদেহের অবস্থান দেখে তাঁর আশঙ্কা এক নয়, একাধিক ব্যক্তি এই কাজ করেছে। পুলিশকে বারবার বলার পরে অসমের তিনসুকিয়া থেকে রাহুল কর্মকার নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তের গতি নেই, তাই সিট গঠন করে তদন্তের দাবি জানান স্ত্রী নাগমা বেগম।
অপরদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কড়েয়ায় খুনের পর হাওড়া স্টেশন দিয়েই পালায় দুই খুনি। হাওড়া স্টেশনের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুই খুনিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, সঙ্গে থাকা বাইক ও স্কুটি হাওড়া স্টেশনের বাইরে কোথাও রেখে তাঁরা ট্রেন ধরে পালিয়েছে ভিনরাজ্যে। যদিও স্কুটি ও বাইকে করেই তাঁরা ভিনরাজ্যে পালিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে রাজ্যের একাধিক টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে পুলিশ। পুলিশ ভিনরাজ্যে তল্লাশি চালিয়েই অবশেষে অসম থেকে রাহুল নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
আজ মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে এই মামলার কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে। কেস ডায়েরি দেখেই তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই শুক্রবার ভোররাতে কড়েয়ার শামসুল হুদা রোডে নিজের অফিস ঘরের ভেতর খুন হন প্রোমোটার সামশের আলি। প্রোমোটারের বাইক ও স্কুটি নিয়ে পালায় তাঁরই ছায়াসঙ্গী তথা ‘বডিগার্ড’ রাহুল ও এক সঙ্গী। সেই সময় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুনিদের বাইক ও স্কুটি নিয়ে পালানোর দৃশ্য ধরা পড়েছে আশপাশের দু’টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ হাওড়ায় পৌঁছয়। হাওড়া স্টেশনের বাইরের সিসিটিভিতেও তাঁদের দেখা গিয়েছে বাইক ও স্কুটি করে যেতে। যদিও তারপর তাঁরা সড়কপথেই পালিয়েছে কি না, তা নিয়ে পুলিশ ধন্দে। পুলিশের ধারণা, শেষ পর্যন্ত হাওড়া থেকে ট্রেনে করেই পালিয়েছে তাঁরা। তাই হাওড়া স্টেশনের ভেতর সিসিটিভির ফুটেজও পুলিশ পরীক্ষা করে দেখে। রাহুলের বাড়ি অসমে হলেও সে বিহার বা অন্য রাজ্যে সঙ্গীকে নিয়ে পালিয়েছে, এমন সম্ভাবনার কথাও জানায় পুলিশ।
অন্যদিকে, রাহুল নামে ওই খুনের মূল অভিযুক্ত সামশেরের কর্মচারী হলেও গত এক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে দু’জনের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, বছর দুয়েক আগে রাজারহাট ও নিউটাউনে বিভিন্ন কাজ করত রাহুল। ওই সময়ে সামশের অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ধরাও পড়েছিলেন। রাজারহাটে যাতায়াতের সূত্র ধরেই রাহুল সামশেরের নজরে আসে। তিনি তাঁকে কাজে নিয়োগ করেন। কিন্তু এক বছর আগে টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে সামশেরের সঙ্গে রাহুলের গোলমাল হয়। তখন তাঁকে এলাকার বাসিন্দারাই তাড়িয়ে দিতে বলেন। যদিও রাহুল ক্ষমা চাইলে সামশের তাঁকে কাজে রেখে দেন। খুনের এক সপ্তাহ আগে ফের দু’জনের মধ্যে গোলমাল হয়। তখন রাহুলকে মারধর করে সামশের। পুলিশের মতে, সেই শোধ তুলতে সামশেরের মাথায় চপার দিয়ে এতটাই জোরে খুনি আঘাত করে যে, তাঁর মাথা থেকে ঘিলুর প্রায় পুরো অংশই ছিটকে গিয়ে পড়ে বালিশ ও বিছানায়। দেওয়ালে পর্যন্ত চপারের দাগ পড়ে যায়।