নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। এপার থেকে ওপার সর্বদা ছুটেই চলেছে। একবিন্দু সময় নেই দাঁড়িয়ে থাকার। তবে যতই ব্যস্ত থাকুক, চা দোকানে আড্ডা মিস করেন না কেউই। চায়ের মাহাত্ম্য এক ফোঁটাও কমেনি।
বাজারের পথে, সকালে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে, অফিসের ব্রেকে, কাজের শেষে সন্ধ্যার আড্ডায়, কিংবা তাসের ঠেকে যেই জিনিসটি ছাড়া বাঙালি একদম চলে না তা হল ‘চা’। হাতে মাটির ভাঁড় বা কাগজের কাপ, তাতে গরম চায়ের ধোঁয়া উঠছে।
হুগলির শ্রীরামপুরে এমন এক চায়ের ঠেক রয়েছে যা দোকানদার ছাড়াই চলে আসছে বছরের পর বছর। কী ঠিক বুঝলেন না তো? শ্রীরামপুরের চাতরা কালি বাবুর শ্মশানের ঠিক বিপরীতে রয়েছে একটি চায়ের দোকান। স্থানীয়দের অনুমান যার বয়স প্রায় ৩০০ বছরের বেশি। একসময় এলাকায় বাজার ছিল, তখন সেই দোকানে ডাব সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি হত। পরবর্তীতে তা চায়ের দোকান করা হয়। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ বছর ধরে চলে আসছে এই চায়ের দোকান। বর্তমানে এই দোকান দেখাশোনা করেন অশোক চক্রবর্তী। যদিও তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সকাল হলে তিনি কাজে বেরিয়ে যান ফেরেন রাতে। কিন্তু তাঁর চায়ের দোকান প্রতিদিনই ভোর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে দোকানে থাকেন না কোন দোকানদার। তাতেই চলে চায়ের বিক্রি। এক কথায় দোকানদার ছাড়াই হয় চা বেচাকেনা। সত্যিই এও কি সম্ভব? হ্যাঁ তেমনই তো হচ্ছে। এখানে মূলত খোদ চা বিক্রেতারাই চা বানিয়ে নিজেরাই খেয়ে নেন তবে চায়ের যা নির্ধারিত মূল্য হয় তা কিন্তু রেখে দিয়ে যান তাঁর ক্যাশ বাক্সের মধ্যে। বাঙালির চায়ের প্রতি যে ভালোবাসা তা এখানে আসলেই বোঝা যায়। তবে এখানে ৫ টাকার চা খেলে একবারের বেশি দু’বার দেওয়া হয়, যদি ভাঁড় না ফেলেন। সকাল কিংবা সন্ধ্যা হলেই আট থেকে আশি সকলেই আসেন এই চায়ের ঠেকে খেতে।
সূত্রের খবর, বর্তমানে এই চায়ের দোকান দেখাশোনা করেন অশোক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘এই দোকানকে সবাই ভালোবাসে। তিনি না থাকলেও চা খেয়ে পয়সা রেখে দিয়ে চলে যায় সবাই। কেউ পয়সায় হাত দেয় না। পুলিশ, উকিল ,ডাক্তার সবাই এই দোকানে আসে। আগামী দিনেও এই ভাবেই চলে আসবে।’