নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: পেট চালাতে প্রতিভায় ভরসা। গণেশের নিপুন হাতের কাজ তাক লাগাচ্ছে সকলকে। বাঁশের টুকরো দিয়ে ১৫০০ বেশি রেপ্লিকা তৈরি করেছেন প্রশিক্ষণ ছাড়াই।
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আগাগোড়া ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে বাঁশ শিল্প। বাংলার মেলাগুলোতে বাঁশের তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রী যেন আলাদাই জায়গা করে নেয় বাকি সমস্ত কিছুর থেকে। বাঁশের তৈরি মুখোশ, পেনদানি সহ বিভিন্ন ঘর সাজানো জিনিস। চন্দননগরের গণেশের হাতের কাজ ঠিক তেমনিই।
এ যেন অবাক করা বিষয়! কোনও প্রশিক্ষণ নয়, কেবলমাত্র নিজের ইচ্ছে এবং প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অসামান্য সৃষ্টি। নিজের ইচ্ছাতেই অসমের বাঁশের টুকরো দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেন গণেশ। এখন সেই কাজই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এক অন্য মাত্রায়। গণেশের বানানো হাতের কাজ এখন দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশেও। গত দু বছর আগে আমেরিকা, সিঙ্গাপুরে পাড়ি দিয়েছিল তার তৈরি জিনিস। আইফেল টাওয়ার ও ডাইনোসরের আমেরিকায় গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তাঁর কাজের কদর ছড়িয়েছে দেশব্যাপী।
তাঁর অসাধারণ শিল্পকলার নৈপুণ্যতায় ছোট ছোট বাঁশের টুকরো দিয়ে গণেশ বানিয়েছেন নবনির্মিত সংসদ ভবন, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, হাতে টানা রিকশা, আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চন্দননগর ডুপ্লেক্স মিউজিয়াম, ব্যান্ডেল চার্চ,মক্কা মসজিদ, রেল ইঞ্জিন, টাইটানিক জাহাজ, আইফেল টাওয়ার, কলকাতার ট্রাম, হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির, কালীঘাটের কালী মন্দির, লালকেল্লা, ডাবল ডেকার বাস।
এই হস্তশিল্পই এখন জীবন জীবিকার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দননগর হরিদ্বারডাঙার গণেশ ভট্টাচার্যের। বাঁশের টুকরো দিয়ে তৈরি করেছেন ১৫০০ বেশি রেপ্লিকা। বর্তমানে তার এই হস্তশিল্প দেশর গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও পা রেখেছে।
অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠেছেন গণেশ। কুড়ি বছর আগে ২৫০ টাকায় শুরু করেছিলেন কাজ। বর্তমানে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে গণেশের পরিবার চলে এখন এই প্রতিভার ভরসাতেই। দু’চোখে স্বপ্ন আরও নতুন কিছু করার। সামগ্রীর বিক্রিতেই সংসার চালাচ্ছেন এই ‘বাম্বু শিল্পী’।
তবে সব কাজের মধ্যে তাঁর বিশেষ কাজ ‘রেল গাড়ি’ বানানো। বাঁশ দিয়ে প্রায় ২৩ রকম ইঞ্জিন বানিয়েছেন তিনি।
তবে গণেশের আক্ষেপ, বর্তমানে বাঁশ শিল্প প্রায় অবলুপ্তির পথে। আর্থিক কারণে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গণেশ। চোখে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের কাছে সাহায্য না মেলায় অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁকে। তবু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধ।
গণেশের কথায় , ‘রেল ইঞ্জিনের প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। নিজে একটা সংগ্রহশালা তৈরি করার ইচ্ছা আছে। যেখানে ১৮৫৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রেলের সমস্ত ইঞ্জিনের রেপ্লিকা থাকবে। তবে এই কাজে অর্ডারও আছে ভালোই। বর্তমানে সেকালের রেল ইঞ্জিন, ব্যান্ডেল চার্চ, ডাবল ডেকার বাসের অর্ডার রয়েছে তাঁর। আর এগুলো সবই কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে চন্দননগরের চার্চ ও মিউজিয়াম তৈরি করে ফ্রান্সে পাঠাতে হবে। কেউ কোন জিনিস তৈরি করতে দিলে তার ছবি দেখেই সেটা তৈরি করে দেওয়া হবে। রং করে একটা ট্রেন বানাতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন।’