নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দু’বছর পর বরাদ্দ বৃদ্ধি মিড-ডে মিলে। তবুও চিন্তার ভাঁজ কপালে। দূর হচ্ছে না শিক্ষকমহলের দুশ্চিন্তা।
সম্প্রতি প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি ক্ষেত্রে বেড়েছে মিড ডে মিলের বরাদ্দ টাকার পরিমাণ। প্রাইমারির ক্ষেত্রে যা আগে ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ১৯ পয়সায়। আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রে ৮ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে হল ৯ টাকা ২৯ পয়সা। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে সত্যিই কি এই টাকায় পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব? সেই আশঙ্কায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিদ্যালয়গুলিতে। এবার এই বিষয় নিয়েই সরব শিক্ষক সংগঠন।
শেষ ২০২২ সালে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে এইটুকু বরাদ্দের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে রাজ্যজুড়ে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির রমরমা। বারংবার অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় মালদহের ইংলিশ বাজার সংলগ্ন ঝঞ্ঝা কুমার বিদ্যাপীঠের কথা।
যেখানে আবার শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই উঠেছিল মিড ডে মিলের চাল ও টাকা তছরূপের অভিযোগ। এরকমই বহু অভিযোগ আসে গোটা বঙ্গের আনাচে-কানাচে কান পাতলে। কোথাও মিড ডে মিলের চাল বিক্রি হচ্ছে পাশের দোকানে। কোথাও আবার বস্তা বস্তা সামগ্রী উধাও এক রাতেই।
কোচবিহারের মানসাই জালালিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে মিড ডে মিলের চাল চুরির অভিযোগ স্কুলেরই গ্রুপ ডি কর্মীর বিরুদ্ধে। আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি এক নম্বর ব্লকে সাবাজপুট উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলে দুর্নীতির অভিযোগের তিরে স্বয়ং স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজেই অভিযুক্ত। দেগঙ্গার চৌরাশি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার ইসলামের বিরুদ্ধেও উঠেছে মিড ডে মিল দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ। এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি।
এছাড়াও সম্প্রতি বহু জায়গায় মিড ডে মিলের খাবারে আবার গণ্ডগোল! কোথাও মিড ডে মিলের চালে পোকা, কোথাও আবার মিড ডে মিলের ভেতর পাওয়া যাচ্ছে আরশোলা, ইঁদুরের মল, টিকটিকি।
বঙ্গের বেশিরভাগ সরকারি শিক্ষাকেন্দ্র গুলিতে যেখানে একবেলা পেট ভরার তাগিদে একসময় কমেছিল স্কুলছুট, সেখানেই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। বিশেষত করোনা আপদকালীন সময়ে সমীক্ষায় দেখা যায় স্কুল ছুটের সংখ্যা বেড়েছিল সর্বাধিক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বর্তমানে মিড ডে মিলের এই করুণ অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই আবারও বাড়াচ্ছে স্কুলছুট। পেট চালানোর তাগিদে গ্রামে-গঞ্জে ক্রমশই বেড়ে চলেছে শিশু শ্রমিক। তাই স্বাভাবিকভাবেই শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে নয় এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সমাজের বিকাশে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আবারও ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরে মিড ডে মিলে বরাদ্দ সরকারি টাকা চিন্তা ফেলেছে শিক্ষক ও পড়ুয়া মহলের বৃহৎ অংশে।
এখন প্রশ্ন একটাই! ঠিক কবে থেকে আর বঞ্চনার শিকার হতে হবে না পড়ুয়াদের? কবে বন্ধ হবে দুর্নীতি? এদিকে ঠিক কবে দৃষ্টিপাত করবে সরকার, তা দেখা শুধুই এখন সময়ের অপেক্ষা।