নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রতিবেশী দেশে বর্তমান অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশ, নৌসেনা, উপকূলরক্ষী বাহিনীকে বাংলাদেশ সীমান্ত ও সংলগ্ন জলপথে যৌথ নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন। জলপথে যেমন নৌবাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনীর নজরদারি চলবে, তেমনই আকাশপথ থেকে চালানো হবে ড্রোন নজরদারি। গোটা মেলা চত্বরের ওপরে নজরদারিতে হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ১২ হাজারের বেশি পুলিশ কর্মীকে মোতায়েন করা হচ্ছে।
নবান্ন সভাঘরে মেলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুটা বিপজ্জনক এলাকা রয়েছে ৷ নীরবে নজরদারি চালাতে হবে ৷ ওপারে তো আমরা যেতে পারব না ৷ তবে, সতর্ক থাকতে হবে ৷ যাতে অবাঞ্ছিত ঘটনা না-ঘটে, তা দেখতে হবে ৷ ওয়াচ টাওয়ার বাড়াতে হবে।’
এই নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি, ড্রোনের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন তিনি ৷ তাঁর আশঙ্কা, এমন শক্তি আছে যারা গঙ্গাসাগর মেলা বানচাল করার চেষ্টা করতে পারে। একদিকে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি ৷ সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের ভুরিভুরি অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে সাগরপাড়ে আয়োজিত হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবে যাতে জলসীমা অতিক্রমের ঘটনা না-ঘটে, সেদিকে গোপনে বাড়তি নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
গত কয়েক বছর ধরেই গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঁচ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১ হাজার ১৫০টি লঞ্চের পাশাপাশি ৩২টি ভেসেল ও ৯টি বার্জের ব্যবস্থা থাকছে। সারা রাত ধরে চলবে ভেসেল। সেই সঙ্গে ওই ভেসেলগুলিতে লাগানো হবে জিপিএস ট্র্যাকিং পদ্ধতি। ধর্মতলা চত্বর থেকে পুণ্যার্থীদের সাগরে পৌঁছে দিতে ২,৫০০ সরকারি বাসের পাশাপাশি ২৫০টি বেসরকারি বাসও থাকছে।
প্রসঙ্গত আগামী বছরের গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে ৮ জানুয়ারী থেকে ১৭জানুয়ারী পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তির বিশেষ পূণ্যস্নান চলবে ১৪ তারিখ ভোর থেকে ১৫ তারিখ ভোর পর্যন্ত। গঙ্গাসাগরে দূর দূরান্ত থেকে আসা পূণ্যার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পুজো ও স্নান সারতে পারেন তার জন্য সবরকম ব্যস্থা রাখতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন।
গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে ঘোষণার জন্য বারবার কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়ে সাড়া না মেলায় এদিন ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু বাংলা থেকে নয়, গোটা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগরে আসেন। কুম্ভ মেলার ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রচুর টাকা অনুদান দেয়। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলায় এক পয়সাও দেয় না। পুরো খরচ করে রাজ্য সরকার। এরই মধ্যে যাতায়াতের সুবিধার জন্য মুড়িগঙ্গা নদীর ওপরে একটা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সেতুর নাম হবে গঙ্গাসাগর সেতু। চার লেনের সেতুটির জন্য এরই মধ্যে ডিপিআর সম্পূর্ণ হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’