নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: হাতে আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরেই বড়দিনের উৎসবে মেতে উঠবে সবাই। বছর শেষে এই দিন থেকেই শুরু হয় বর্ষবিদায় উৎসব। কলকাতা সহ শহরতলীর আনাচে কানাচে সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। তবে এবার তার আগেই নবরূপে সেজে উঠেছে হুগলি জেলার ঐতিহ্যবাহী চার্চগুলি। শ্রীরামপুর থেকে ব্যান্ডেল প্রত্যেকটি চার্চ আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে। শ্রীরামপুরে চার্চ ও স্টেশন চত্বরে পুরো রাস্তা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে তোরণ ।
উল্লেখ্য, ১৫৯৯ সালে ব্যান্ডেলে বাণিজ্য করতে এসে এই গির্জা নির্মাণ করে পর্তুগিজরা। ভারতবর্ষের প্রাচীন গির্জার মধ্যে ব্যান্ডেল চার্চ অন্যতম। সারা বছরই প্রচুর মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে এই শতাব্দী প্রাচীন ব্যান্ডেল চার্চ দেখতে ভিড় জমান। আর বড়দিনে ভিড় থাকে উপচে পড়ার মতো।
অন্যদিকে, বড়দিন উপলক্ষে শ্রীরামপুরে সেন্ট ওলাভ চার্চকে ঘিরে ১২ দিনের উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই চার্চের ইতিহাসের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত চার্চের মাথায় লাগানো ঘড়িটি। কিন্তু সেই ঘড়ির কাঁটা থমকে রয়েছে ৪টা বেজে ১০ মিনিটে। চার্চ কর্তৃপক্ষের দাবি, টেকনিক্যাল লোক না আসাতেই সমস্যা। যদিও চার্চের সেক্রেটারি জানান, ঘড়ি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে বড় দিনের আগে ঘড়ি চালু হওয়া সম্ভব নয়।
এই শ্রীরামপুর এক সময়ে ডেনিসদের কলোনি ছিল। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ডেনিসদের বহু স্থাপত্য সেই ইতিহাস বহন করে। ১৮০০ সালে শুরু হয়েছিল সেন্ট ওলাভ চার্চ। ১৮০৬ সালে এই চার্চের কাজ সম্পন্ন হয়। ডেনিস গভর্নর ওলি বি এই চার্চের প্রতিষ্ঠাতা। এই চার্চ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজারের বেশি কিছু টাকা। একসময় অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি তিনিও এই চার্চে আসতেন।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা তথা অধ্যাপক ভাস্কর চৌধুরী বলেন, ‘এই ঘড়ি অত্যন্ত প্রাচীন এবং চার্চের একটি মূল্যবান সম্পদ। যে কোন চার্চে একটি ঘড়ির সম্পর্ক থাকে। ছোটবেলায় আমরা এই ঘড়ির ঘন্টা শুনতে পেতাম। কিন্তু এই ঘড়ির দম দেওয়ার বিষয়ে কিছু টেকনিশিয়ানের দরকার হয়। তাঁরা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তবে আমরা আশাবাদী চার্চ কর্তৃপক্ষ এটা খুব দ্রুত চালু করবেন।’
চার্চের ফাদার অনুপ মণ্ডল জানান, ‘এই চার্চের দায়িত্বে আছে ডাইসিস। এই ঘড়ি দম দিতে প্রতি সপ্তাহে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। মাসে ১২ হাজার টাকা। আমরা নিজেরা এটাকে সারাতে গেলে তার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। দম দিলেই ঘড়ি চলবে, কিন্তু ঘন্টা বাজবে না। এই ঘড়ির জন্য কলকাতা থেকে লোক আসে। আমরা চেষ্টা করব মেরামত করার, তবে টেকনিক্যাল লোক না এলে এগুলো সরানো যায় না। দু-তিন মাস হল ঘড়িটি বন্ধ আছে।’