দুবার ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়েও কাবু হল না জিনাত!

জেলা রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দু’বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েও কাবু করা গেল না বাঘিনী জিনাতকে! এখনও জারি রয়েছে তার জঙ্গল সাফারি।

শনিবার দু’-দু’বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েও কাবু করা যায়নি ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকে পালানো এই বাঘিনীকে। গতকাল শনিবার ভোরে পুরুলিয়ার ডাঙরডিহির জঙ্গল থেকে বাঘিনি ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। রেডিও কলারের মাধ্যমে বাঘিনীর অবস্থান নিশ্চিত হতেই তাকে বাগে আনার চেষ্টা শুরু করেন বন দফতরের কর্মীরা। দিনের আলোয় তাকে দেখতে পেয়ে গতকাল দুপুরে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন বন দফতরের কর্মীরা। কিন্তু গুলিতে কাবু করা যায়নি তাকে।

এরপর জাল দিয়ে জঙ্গলের চারদিক ঘিরে আগুন জ্বালিয়ে রাতভর পাহারা দেন বন দফতরের কর্মীরা। ইনফ্রারেড থার্মাল ড্রোনের সাহায্যে বাঘিনীর লোকেশন ট্র‍্যাক করে রাতে ফের ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। তবে সেই ঘুমপাড়ানি গুলি আদৌ বাঘিনীর গায়ে লেগেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বাঘিনীকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে বারবারই নাস্তানাবুদ হচ্ছেন বনকর্মীরা। ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকে পালানো বাঘিনীর জঙ্গলমহল সফরে ছেদ পড়েনি। এক জেলা থেকে আরেক জেলা, একের পর এক ফাঁদ এড়িয়ে জঙ্গল মহলের একাধিক এলাকায় বারবার জায়গা বদল কর চলেছে বাঘিনী। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার পর এই মুহূর্তে বাঘিনীর অবস্থান বাঁকুড়ায়। ৩০ থেকে ৪০টি পয়েন্ট করে মশাল জ্বালিয়ে ব্যারিকেড করে চলছে নজরদারি। পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমেও চলছে পর্যবেক্ষণ। বাঘিনী কোথায় রয়েছে তা চিহ্নিত করে ফের ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে বাঘিনীকে বাগে আনার চেষ্টা চালাবেন বনদফতরের কর্মীরা।

বাঘিনীকে বাগে আনতে বন দফতরের তরফে একাধিক খাঁচা পাতা হয়েছে। পাতা হয়েছে জালও। টোপ হিসেবে ছাগল গরু শুয়োর রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই সব টোপে মুখ দেয়নি জিনাত। সে নিজের মনেই জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম থেকে ছাগল শিকার করে খেয়ে চলেছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন জঙ্গল মহলের বাসিন্দারা। কারণ এই কালো ছাগল পোষা তাঁদের রুজি রোজগারের মাধ্যম। তাঁর ওপরে জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতিতে ভয়ে বনজ সম্পদ যা তাঁদের আরেক রুজি রোজগারের মাধ্যম তাও সংগ্রহ করতে যেতে পারছেন না।

রেডিও কলারের মাধ্যমে এই বাঘিনী জিনাত তার উপস্থিতি জানান দিলেও ফাঁদে পা দিচ্ছে না! টোপ গিলেছে না। খিদের জ্বালা মেটাতে জঙ্গলে চড়তে যাওয়া গবাদি পশুদের ওপর হামলা চালিয়ে শিকার করে খাদ্য সংগ্রহ করছে।

খাঁচার পাশ দিয়ে ঘুরলেও টোপে ধরা দিচ্ছে না! দেখা যাচ্ছে, টোপের ছাগল নয়, শিকার করেই খিদে মেটাতে ব্যস্ত এই বাঘিনী। টোপ দেওয়া ছাগল ছুঁয়েও দেখছে না। অথচ জঙ্গলের আশেপাশে চড়ে বেড়ানো গৃহপালিত পশুদের ঘাড় মটকাচ্ছে। মৃত ছাগলের শরীরে থাবার চিহ্ন দেখেই বন কর্মীদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এ কার কীর্তি। তবুও নিশ্চিত হতে পরীক্ষা নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনবিভাগ।

সম্প্রতি ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে উধাও হয় দুই বাঘিনী জিনাত ও যমুনা। তাদের গলায় পরানো রেডিও কলারের মাধ্যমে ঝাড়খণ্ডে খোঁজ মেলে বাঘিনী যমুনার। অন্যজন জিনাত পাড়ি দেয় এই বাংলায়। সেই জিনাতকে এখনও বাগে আনতে পারেনি বন দফতরের কর্মীরা।