‘হায় হায় সাত পাকে বাঁধা পড়ো না…’ অংশুমান রায়ের গাওয়া এই গান কেউ ভোলেননি। তা বলে বিয়ে না করলে চলে! অন্তত এক বার ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ চেখে দেখা উচিত। এই আপ্তবাক্য মেনে ২০২৪-এর শুরু থেকে শেষ সানাইয়ের সুরে মাতোয়ারা সেলিব্রিটিরা। সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন অনেকেই। কারা কারা জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করলেন কালুন দেখে নেওয়া যাক।
অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্ট : অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্ট ১২ জুলাই ২০২৪ মুম্বাইয়ে হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে করেছেন। তাঁদের কলেজ জীবন থেকে প্রেম আর পরিণতি পেল ২০২৪ এ । তাঁদের প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠান ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো, যেটি হয়েছিল ইতালি থেকে ফ্রান্স এর একটি ক্রুজে। সেখানেও অনেক সেলিব্রিটিরাও উপস্থিত ছিলেন। ১২ জুলাই বিবাহ অনুষ্ঠানের পর ১৩ জুলাই একটি দুর্দান্ত শুভ আশীর্বাদ অনুষ্ঠান যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ আরো অনেক নামি-দামি ব্যাক্তি। ১৪ জুলাই ছিল তাঁদের রিসেপশন। সেখানে বলিউড সহ আন্তর্জাকিত সেলিব্রিটিরাও উপস্থিত ছিলেন। বিবাহের এক একটি অনুষ্ঠান ছিল কক্ষে পড়ার মতো। চলতি বছরে এটি সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল বিয়ে হিসেবে অনুমোদিত হয়।
সোনাক্ষী সিনহা ও জাহির ইকবাল : সনাক সিনহা ও জাহির ইকবাল ২৩ জুলাই, ২০২৪ এ তাঁদের মুম্বাইয়ের বাসভবনে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেছেন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয়-পরিজন। ৭ বছর সম্পর্কে থাকার পর তাঁরা ২০২৪এ বিবাহবন্ধনে অবোধ হন। তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠানে সালমান খান, রেখা, সায়রা বানু, বিদ্যা বালন সহ বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিয়ে নিয়ে নানা গুঞ্জন সোনা গিয়েছিল। সোনাক্ষি-জাহিরের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোনা গিয়েছিল শত্রুঘ্ন সিনহা নাকি এই বিষয়ে কিছু জানতেন না। পরে জামাইকে ‘গুড বয়’ সার্টিফিকেট দিয়ে গুঞ্জনেজল ঢেলে দেন।
অদিতি রাও ও সিদ্ধার্থ: অদিতি রাও ও সিদ্ধার্থ ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরে বিয়ে করেন। অদিতি তাঁদের বিয়ের সুন্দর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, যেখানে তাঁদের দুজনকে বিয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেখা গেছে। অদিতি রাও সোশ্যাল মিডিয়ায় যেখানে তাঁদের ছবি পোস্ট করেছিলেন সেখানে সিদ্ধার্থকে ‘সূর্য, চাঁদ ও তাঁরা’ বলে বর্ণনা করেন। অদিতি আরো বলেন, তাঁদের বিবাহ ছিল একে ওপরের প্রতি অঙ্গীকারের একটি ব্যাক্তিগত উদযাপন।’
রাকুল প্রীত ও জ্যাকি ভাগনানি: তিন বছরের প্রেমের শুভ পরিণয়। ২১ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় তারকাখচিত অনুষ্ঠানে বলিউড প্রযোজক তথা অভিনেতা জ্যাকি ভাগনানিকে বিয়ে করেন রাকুলপ্রীত সিং। তরুণ তাহিলিয়ানির ডিজাইন করা গোলাপি পোশাকে বিয়ের দিন সেজেছিলেন অভিনেত্রী। প্রযোজক-অভিনেত্রীর বিয়ে যখন, তখন ফিল্মি কেত তো থাকবেই। রাকুলপ্রীত-জ্যাকির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। বন্ধু-পরিবারকে সাক্ষী রেখে পড়ন্ত বিকেলের নরম রোদে এক হয় চারহাত।
নাগা চৈতন্য ও শোভিতা ধুলিপালা: দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভুকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন দক্ষিণী তারকা নাগা চৈতন্য। তবে সে সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। সামান্থার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন অভিনেত্রী শোভিতা ধুলিপালার সঙ্গে নাকি প্রেমের সম্পর্কে জড়ান নাগা। ২০২২ সালে শোভিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সেইসময় হায়দরাবাদে মাঙ্কিম্যান সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন অভিনেত্রী। নাগা চৈতন্যর সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করতেও দেখা যায় তাঁকে। সেই পার্টিতেই নাকি একে-অপরকে মন দিয়ে বসেছিলেন নাগা চৈতন্য এবং শোভিতা ধুলাপিয়া। তেলুগু রীতিনীতি মেনে গত ৪ ডিসেম্বর বিয়ে সারেন। দুজনের পোশাকে ছিল দক্ষিণী ঐতিহ্যের ছোঁয়াও।
কাঞ্চন মল্লিক ও শ্রীময়ী: পিঙ্কির সঙ্গে কাঞ্চন মল্লিকের তাল কেটেছিল আগেই। মনের শূন্যস্থান দখল করেছিলেন শ্রীময়ী। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমদিবসে আইনি বিয়ে সেরে ফেলেন দুজনে। ১৭ ফেব্রুয়ারি শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুরদান। সাতপাকে বাঁধা পড়ে দুটি মন। বিয়ের পর থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তাঁরা। টলিউড লাভ বার্ডসের হানিমুন, সংসার নিয়ে শুরু হয় জোর চর্চা। তারই মাঝে সকলকে অবাক করে বিয়ের সাড়ে আট মাসের মাথায় দ্বিতীয়বার বাবা হন কাঞ্চন। শ্রীময়ীর কোল আলো করে আসে কন্যাসন্তান। আপাতত মেয়েকে নিয়ে সময় কাটছে কাঞ্চন-শ্রীময়ীর।
অনুপম রায় ও প্রস্মিতা: ২০১৫ সালে পিয়া চক্রবর্তীকে বিয়ে করেছিলেন অনুপম রায়। ৬ বছরের মাথায় বিচ্ছেদের ঘোষণা। এর পর ২০২৩ সালে নভেম্বরে টলিউডের মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুপমের প্রাক্তন পিয়া বিয়ে সারেন। গত ২ মার্চ, প্রস্মিতার সঙ্গে রেজিস্ট্রির মধ্যে দিয়ে চারহাত এক হয় অনুপম ও প্রস্মিতার। গানের দুনিয়ার দুই মানুষের মন দেওয়া নেওয়া যে কবে হল, নিজেরা তা মনে করতে পারেন না।
সোহিনী সরকার ও শোভন গঙ্গোপাধ্যায়: সোহিনী ও শোভন অভিনেত্রী-গায়কের গাঁটছড়ার গপ্পো দারুণ রসালো। এক বার করে প্রেমের খবর রটেছে আর গায়ক দায়িত্ব নিয়ে তা নাকচ করেছেন। আবার তিনিই প্রেমের নানা মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে ফাঁস করেছেন। পরে সে সবও নিজ দায়িত্বে মুছেছেন। বিদেশে আংটিবদল সেরেছেন। নায়িকা সাত পাক ঘোরার আগে শাঁখা পরে সেজেছেন। তার পর বহু প্রতীক্ষিত সেই দিন। ১৪ জুলাই খামারবাড়িতে দুই পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে সপ্তপদী, সিঁদুরদান। বিয়ের বাসরে গানবাজনার আসর মন ভরিয়েছিল অনুরাগীদের।
রূপাঞ্জনা মিত্র ও রাতুল মুখোপাধ্যায়: সিঙ্গল মাদার রূপাঞ্জনা। ২০১৭ সাল থেকে ছেলে রিয়ানকে একাই বড় করেছেন। রাতুলও টলিপাড়ার চেনা মুখ। শুটিং ফ্লোরেই নাকি দুজনের আলাপ। তারপর বন্ধুত্ব ও প্রেম। নিজের সম্পর্ক নিয়ে কখনও লুকোছাপা করেননি রূপাঞ্জনা। বরং হামেশাই জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্ক পরিণত। গত ১৯ এপ্রিল কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে বিয়ে সারেন রূপাঞ্জনা ও রাতুল। পরনে লাল বেনারসি। গলায় গোলাপ ফুলের মালা। আর কোলে ছেলেকে বসিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে সারেন রূপাঞ্জনা। অন্যদিকে, ধুতি-চাদরে বর বেশে রাতুল। যে পান সরিয়ে রাতুলকে তিনি দেখলেন, অভিনবত্ব ছিল সেই পানেও। তাতে আঁকা। সঙ্গে লেখা শুভবিবাহ। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে দার্জিলিংয়ে বাগদান সারেন দুজনে।
আদৃত ও কৌশম্বি: দিদিয়াকে বিয়ে আদ্রিতের! চমকানোর মতো কিছু নয়। বাস্তবে সত্যজিৎ রায় তাঁর মামাতো দিদি বিজয়া রায়কে বিয়ে করেছিলেন। টলিপাড়ার আদৃত রায় ‘দিদিয়া’কে বিয়ে করছেন। রসিকতা নয়, ধারাবাহিক ‘মিঠাই’য়ে তাঁর ‘দিদিয়া’ই ছিলেন কৌশাম্বী চক্রবর্তী। সেটেই উথালপাতাল প্রেম। ৯ মে ধুমধাম করে পরিণয়।
রূপসা চট্ট্যোপাধ্যায় ও সায়নদীপ সরকার: ৩ অক্টোবর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন এই টেলি অভিনেত্রী। আইনী বিয়ে সেরেছিলেন অনেক আগেই। এবার ৩ অক্টোবর, ২০২৪ এ গাঁটছড়া বেঁধেছেন রূপসা চট্টোপাধ্যায় ও সায়নদীপ সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুললেই দেখা যায় জুটির নানা আদরমাখা মুহূর্ত। আইনি বিয়ের পর এবার সামাজিক বিয়ের পালা। সাবেকি লুকে কনে রূপে দেখা যায় রূপসাকে।