নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: বছরের শেষবেলায় একটি ফাঁকা কার্ড যাতে হিজিবিজি করে লেখা কয়েকটা শব্দ, একসময় মন ভরাতো সকলের। কতইনা নস্টালজিক সেই দিন! কিন্ত সময়ের ঘষায় সুদূরে ঝাপসা গ্রিটিংস।
যেদিন ফিরে আসে না বহুকাল। সময়ের ঘষা লেগে যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আধুনিক টেকনোলজির যুগে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ছোটবেলার সেই খুব প্রিয় পছন্দগুলো। এক সময় বছরের শেষ দিনেই গ্রিটিংস কার্ড দেওয়ার চল ছিল বাচ্চা থেকে বড় সকলের মাঝে।
গ্রিটিংস-এ নতুন বছরের শুভেচ্ছা, সাথে ভালোবাসাই যেন ছিল শ্রেষ্ঠ উপহার। একটি শক্ত কাগজের টুকরোতে কয়েকটি ভাঁজ ব্যাস এইটুকুই খাটুনি। কিংবা পকেটে অল্প কিছু টাকা থাকলেই হয়তো রকমারি বিভিন্ন রকম কার্ড যেকোনো প্রকারে পৌঁছে যেত প্রিয় মানুষের কাছে। বর্তমানে আর সেসব কই!
কেবলমাত্র কচিকাঁচাদের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে সেসব স্মৃতি। বদলে মোবাইলে পৌঁছে যাচ্ছে ছোট্ট একটি মেসেজ নতুন বছরের শুভেচ্ছায়। কিন্তু জানেন কি এই গ্রিটিংস কার্ডের ইতিহাস? কেন গ্রিটিংস দিয়েই শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয় নতুন বছরের? বছরের শেষ বেলায় নিউসপোলের তরফ থেকে রইল সেই কাহিনী অবলম্বনে বিশেষ নিবেদন।
গ্রিটিংস কার্ড প্রথম ব্যবহার করা হতো চীন এবং মিশরে। প্রাচীন চীনা এবং মিশরীয় সংস্কৃতিতে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য উদ্ভূত হয়েছিল এই কার্ড। চীন ও মিশরে নতুন বছর উদযাপনের জন্য সৌভাগ্যের শুভেচ্ছা পাঠানোর বার্তা দেওয়া হত এই কার্ড বিনিময়ের মাধ্যমে।
মিশরীয়রা প্যাপিরাস স্ক্রোলগুলিতে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হতো গ্রিটিংস কার্ডে। প্যাপিরাস একটি কাগজের মতো উপাদান যা প্রাচীনকালে ব্যবহৃত হত এবং প্যাপিরাস গাছের কান্ড থেকে তৈরি হত।বহু শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে ১৫ শতকের ইউরোপে শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষেত্রে নথিভুক্ত করা হয় এই পদ্ধতিকে। মূলত ওই সময় থেকে ইউরোপেও শুরু হয় গ্রিটিংস কার্ডের বিনিময়। তবে সে সময়ের কার্ড গুলি কাগজের নয়, বানানো হতো কাঠের উপর খোদাই করে।
নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনাগুলি কাঠের কাটাগুলিতে খোদাই করা হতো। পরে সময় পাল্টায় আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুভেচ্ছা পাঠানোর দায়িত্ব নেয় কার্ডটি। হস্তনির্মিত শুভেচ্ছার ব্যাপক ব্যবহারের লক্ষ্য
করা যায় চারিদিকে। বিশেষত সে সময়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিনেও এই ধরনের কার্ড দেওয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।
উল্লেখ্য, সবচেয়ে পুরনো ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ডটি ১৪১৫ সালে এক ফরাসী তাঁর স্ত্রীর প্রতি প্রেমের কবিতা হিসেবে লিখেন বলেই জানা যায়। তবে গ্রিটিংস এর পিছনের ইতিহাস ঘিরে অনেক দেশের কাহিনী সাথেই মেলে না অপর দেশের কাহিনী। মতবিরোধ রয়েছে কাহিনীকে ঘিরে।
তবে মতবিরোধ যতই থাক আজও গ্রিটিংস কার্ডের নাম শুনলেই জীবনের নস্টালজিক দিনগুলোতে হারিয়ে যান অনেকেই। এখনও স্কুল পড়ুয়া কিংবা খুদেদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা না থাকলেও আনাচে-কানাচে থেকে গিয়েছে এই কার্ডের গুরুত্ব। আধুনিক যুগের সোশ্যাল মিডিয়ার শুভেচ্ছার চল পুরোপুরি মোছেনি পুরনো সেসব স্মৃতি। এখনও পুরোপুরি শক্তি খোয়ায়নি গ্রিটিংস।