নিজস্ব প্রতিনিধি, বীরভূম: বছরের শুরু থেকে শেষ বাঙালিদের খাওয়া-দাওয়ার চলতেই থাকে। বিশেষ করে শীতকাল আসা মানেই বাঙালিদের খাওয়া-দাওয়ার যেন হিড়িক পড়ে যায়। আর বনভোজন তো আলাদাই ব্যাপার। বনভোজন অর্থাৎ কোনও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে রান্না করে খাওয়ার মজাই আলাদা। এই বনভোজন বা চড়ুইভাতিতে বাঙালিদের পছন্দের নানারকম পদ থাকে আর শেষ পাতে নলেন গুড়ের সন্দেশ, পায়েস বা রসগোল্লা ছাড়া অসম্পূর্ণ।
তবে শুধু মানুষের বনভোজন নয়, দেব-দেবীরাও বনভোজন করে থাকেন। তাঁদের বনভোজনে থাকে নানারকম আকর্ষণীয় খাবার, যা সাধারণ বনভোজনের থেকে অনেকটাই আলাদা। রাজকীয় এই বনভোজনে থাকে নানারকম নিরামিষ পদ। দেবতাদের বনভোজনের কথা হয়তো অনেকের কাছেই অগোচর। কিন্তু এরকমই এক বনভোজন আয়োজিত হয়েছে বীরভূমের হেতমপুরে। আর এই দৃশ্য উপভোগ করতে সমাগম ঘটে বহু ভক্তের।
বছরের শুরুতেই ভক্তদের নিয়ে বনভোজন সারলেন দেবতা বীরভূমের হেতমপুরে। রাজকীয় এই দিনটিতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা, শ্রীকৃষ্ণ ছাড়াও গোপালজি ও বনমালিকে নিয়ে ভক্তদের এই বনভোজনের রীতি দুবরাজপুরের হেতমপুরের গৌরাঙ্গ মাঠে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। গৌরাঙ্গ মঠের মন্দিরের পিছনে যে জঙ্গল আছে সেই জঙ্গলে ভগবানকে নিয়ে ভক্তরা বনভোজনে মেতে ওঠেন। বনভোজনের শেষে দেবতাদের আবার মূল মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
এখন প্রশ্ন কেন এই প্রথা? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত এই প্রথা সম্পর্কে –
গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ ভক্তি বারিদি ত্রিদণ্ডী মহারাজ জানিয়েছেন, এই রীতি বহু বছর ধরে চলে আসছে। ২০০৭ সালে এই দিনেই হেতমপুরের রাজা মাধবিরঞ্জন চক্রবর্তী তাঁদের হাতে মন্দির ও দেবতাদের সেবার দায়িত্ব তুলে দেন। তাঁরা নিজেরাও এই দিনটিকে একটু আলাদাভাবে পালন করার চেষ্টা করেন। এই বনভোজনে মূল পদ ৪ রকমের হয়ে থাকে ও ভক্তদের খাওয়ার জন্য আরও ৫০-৬০ রকমের পদের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখযোগ্য পদের মধ্যে থাকে সাদা অন্ন, পুষ্পান্ন, খিচুড়ি ও পরমান্ন। এর সঙ্গে থাকে নানারকম মিষ্টি ও পায়েস।
বনভোজনে শুধু খাওয়া-দাওয়া নয় বিনোদনের জন্য থাকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বাজনা ও হরিনাম সংকীর্তন। এর মধ্য দিয়ে বনভোজন বেশ জাকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রীতি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। এই বনভোজনে অংশগ্রহণ করতে দূরদূরান্ত থেকে অনেক ভক্তরা আসেন।