প্রয়াত প্রখ্যাত পদার্থবিদ রাজাগোপাল চিদাম্বরম

breakingnews দেশ প্রযুক্তি বিজ্ঞান

নিউজ পোল ব্যুরো: চলে গেলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ রাজাগোপাল চিদাম্বরম। শনিবার মুম্বাইয়ের যশলোক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

ডিরেক্ট ইন্সট্রাকশন (ডিআই) কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আজ সকালে অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি, 2025 এ ৩:২০ মিনিটে একজন বিশিষ্ট পদার্থবিদ এবং ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডক্টর রাজা গোপাল চিদম্বরমের মৃত্যু ঘোষণা করছি। আমরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে জানাই যে, বিজ্ঞানে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন আমাদের চিরকাল মনে থাকবে।’

চেন্নাইয়ের মিরাটে ১৯৩৬ সালে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ছিল মিরাটে। এরপর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় তিনি স্নাতক কমপ্লিট করেন। এরপর তিনি ব্যাঙ্গালোরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’এ গবেষণার কাজে রত ছিলেন। চিদাম্বরম তাঁর কর্মজীবন জুড়ে অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – ভারত সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা (২০০১ – ২০১৮), ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (১৯৯০ – ১৯৯৩), পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ভারত সরকারের সচিব, DAE (১৯৯৩ – ২০০০)। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) -এর ‘বোর্ড অফ গভর্নরের চেয়ারম্যান’ (১৯৯৪-১৯৯৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চিদাম্বরম ভারতের পারমাণবিক ক্ষমতা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। DI এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চিদাম্বরম ১৯৭৪ সালে দেশের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষায় একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ১৯৯৮ সালে Pokhran-II পারমাণবিক পরীক্ষার সময় পারমাণবিক শক্তি বিভাগ দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’ একজন বিশ্বেমানের পদার্থবিদ হিসেবে উচ্চচাপ পদার্থবিদ্যা, ক্রিস্টালোগ্রাফি ও পদার্থ বিজ্ঞানে ড. চিদাম্বরমের গবেষণা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। তাঁর অগ্রণী কাজ ভারতের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তিস্থাপন করেছিল।

তিনি শক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৌশলগত প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিতে তাঁর উদ্যোগগুলি অকল্পনীয়। এছাড়াও তিনি অসংখ্য প্রকল্প পরিচালনা করেছেন যা ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ল্যান্ডস্কেপকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। সুপারকম্পিউটারগুলি ভারতের স্বদেশ বিকাশের সূচনা এবং জাতীয় জ্ঞান নেটওয়ার্কের ধারণা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা সারা দেশে গবেষণাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত করেছেন।

তিনি ১৯৭৫ সালে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত হন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। বিশিষ্ট ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান একাডেমী একজন ফেলো ছিলেন। DI এর সেক্রেটারি অজিত কুমার মহান্তি মৃত্যুকে এক অপরনীয় ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একজন সত্যিকারের স্বপ্নদর্শীকে হারিয়ে ফেললাম। পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।’