আর নয় দুধ চা! বিপদে ‘রাশিয়ান দিদি’

breakingnews শহর

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: যেমন রূপ তেমন গুণ! দুইয়ের মিলনে ইনস্টাগ্রামে চলছিল রমরমে ব্যবসা। মুগ্ধ ভক্তমহল রাশিয়ান দিদিকে একবার দেখতে সুদূর থেকে আসছিল দোকানে। দলে দলে নেটিজেনরা ভিড় জমাচ্ছিল দোকানে। ভালোই চলছিল ব্যবসা, কিন্তু আচমকাই এ কি হল! নিমিষেই বিপত্তি নেমে এলো সুখের পথচলায়।
চল্লিশহাজার টাকা ছাড়াও ‘মাসোহারা’ দিতে হত ক্লাবকে! তারপরও বন্ধ করে দিল ওরা, ভাইরাল ‘রাশিয়ান দিদি’র ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। জানার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পরিবারেও মধ্যেও ছড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা।

হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা পাপিয়া ঘোষাল পরিচিত রাশিয়ান দিদির নামে। যিনি ন্যাশনাল হাইওয়ের ধারে একটি চায়ের দোকান খুলেছিলেন। ‘তে আমো’ নামে ওই চায়ের দোকানের মালকিনকে সবাই রাশিয়ান দিদি বলেই চেনেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। কলকাতার আশুতোষ কলেজের প্রাক্তনী পাপিয়া একসময় কর্পোরেট জব ও মডেলিং করেছেন। তিনি তাঁর সেভিংস থেকে ষাটহাজার টাকা বিনিয়োগ করেই খুলেছিলেন চায়ের দোকান। স্থানীয় ক্লাবের সাহায্য নিয়ে খুলে ফেলেন দোকান। পাপিয়ার স্বপ্ন ছিল, চায়ের দোকান একদিন হয়ে উঠবে ক্যাফে। তৈরি হবে ব্র্যান্ড। শুরুতেই সাফল্যের মুখও দেখেছিলেন তিনি, কিন্তু এই সাফল্যের পথেই বাধা হয়ে দাঁড়ালো তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা।

বিপুল জনপ্রিয়তার জন্যই নাকি বন্ধের পথে তাঁর দোকান। প্রতিনিয়ত দোকানে প্রচুর জমায়েতই কাল হলো তার। তাঁর ক্রেতাদের সেলফি, ভিডিয়ো, লাইভ ভিডিয়ো। লাইন পড়তে থাকে ফুড ব্লগারদের। মাস দুয়েক আগেও তিনি ইন্সটাগ্রামে ছেয়ে গিয়েছিল তাঁর ভিডিয়ো। অনেকেই তাঁর দোকানের চায়ের প্রশংসা করে ভিডিয়ো কনটেন্ট বানাচ্ছিলেন এ কারণে সারাক্ষণই ভীরে ঠাসা থাকে চত্বর। হাইওয়ের ধারে যা একেবারেই সহ্য করছে না প্রশাসন। বর্তমানে বিরক্ত প্রকাশ করছেন আরও অনেক স্থানীয়রাও। আর আজ দেনার দায়ে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

পাপিয়ার স্বপ্ন ছিল, চায়ের দোকান একদিন হয়ে উঠবে ক্যাফে। তৈরি হবে ব্র্যান্ড। শুরুতেই সাফল্যের মুখও দেখেছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে ভিড় জমত প্রচুর। ছড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর ক্রেতাদের সেলফি, ভিডিয়ো, লাইভ ভিডিয়ো। লাইন পড়তে থাকে ফুড ব্লগারদের।
রাশিয়ান দিদি-র দোকানে চায়ের দাম ছিল ৭ টাকা। কেউ কেউ নেগেটিভ কমেন্ট করলেও তাতে পাত্তা দিতেন না পাপিয়া। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা ফোন আসে তাঁর কাছে। তিনি জানতে পারেন, দোকান বন্ধ করার নোটিস দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ ফোন তোলেনি।

কিন্তু কে দিল সেই নোটিস? দোকানের শাটারে সাঁটানো কাগজে লেখা, গ্রামবাসীদের তরফ থেকে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হল অনির্দিষ্টকালের জন্য। এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, ওই দোকানের সামনে এত বেশি গাড়ি ও বাইকের লাইন পড়ত, যার জন্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হত।

তবে অনেকের মতে তার এই অতি আধুনিক পোশাক পড়ে চায়ের দোকান চালানো মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রাই। টাইট পোশাক, স্লিভলেস কুর্তা পরতেন পাপিয়া তা নিয়েও ছিল অনেক আপত্তি। তবে কারণ যাই হোক, আপাতত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন পাপিয়া ঘোষাল। বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছেন বহুকাল আগেই, বিয়েও করেননি তিনি সুতরাং বর্তমানে দোকানই একমাত্র সম্বল তাঁর। এবার সেই দোকান বাঁচাতে পুলিশও বিশেষ সাহায্য করছে না তাঁকে।
উল্টে পুলিশের দাবি, এফআইআর দায়ের করা হলেও থানায় যাননি ওই মহিলা। সংবাদমাধ্যমে পাপিয়া আরও জানিয়েছেন, এককালীন চল্লিশ হাজার টাকা তিনি দিয়েছিলেন ক্লাবকে। এছাড়াও মাসে মাসে তিন হাজার টাকা করে দিতে হত। সুতরাং হিংসা করেই তার দোকানটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এমন ইঙ্গিত করেছেন পুলিশও।
তবে আচমকা এরকম খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাঁর শুভাকাঙ্খীরা।