প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিখুঁত মডেল!

বিনোদন সংস্কৃতি

মন্দিরা সরদার, কলকাতা: পেট চালাতে টিউশনিই ভরসা, প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচিয়ে রেখেছেন সখের কাজ। প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাক লাগানো হাতের কাজ নেশা মানিক বাবুর। প্রতিভা স্পষ্ট তাঁর কাজে, তবে শেখেননি কোনদিন। কলকাতার বড়বাজারের অলিতে গলিতে ঘুরে নিজেই আনেন সামগ্রী আর তারপর লেগে পরেন কাজে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ধ্যানে জ্ঞানে শুধুই হাতের কাজই। তবে আগামীতে প্রতিভার উপরেই ভরসা করতে মন চাইলেও

সুযোগ হচ্ছেনা সেভাবে। তাই আপাতত নিজ বাড়ীর চত্বর আর তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে প্রতিভাকে। কাগজের টুকরো আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে নিখুঁত হাতের জাদুতে মানিক বানিয়ে ফেলেন মিনি গিটার। গিটারে তার লাগিয়ে বাজিয়েও দেখান সকলকে। ছোটো থেকে বড়ো বিভিন্ন সাইজের গিটার বানিয়েছেন তিনি। এই গিটার দিয়েই তাঁর প্রথম কাজের শুরু।

রিকশা কিংবা সাইকেল রিকশা এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন। যদিও দেশভেদে এর গঠন ও আকারে বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়। তবে অতীতের কলকাতা মানেই হাতে টানা রিকশা তা

বলাই বাহুল্য। কলকাতার অতি প্রাচীন যানবাহন গুলির মধ্যে এটিও একটি। তবে সময়ের সাথে সাথে দ্রুতগামী যানবাহনের ভিড়ে যেন আরও হারিয়ে যাচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছে রিকশা। তাই আবেগপ্রবণ মানিক শুধুমাত্র এই কারণে

তাঁর হাতের কাজ ফুটিয়ে তুলেছেন এই ধারণায়। কয়েক ঘণ্টার পরিশ্রমে মতি সহযোগে বানিয়ে ফেলেছেন রিকশা।কাগজ কেটে বানিয়েছেন আস্ত একটি বাড়ি। নিতান্তই এক কামরার ছোট্ট বাড়ি নয় একেবারে তিনতলা। বাড়ির ছাদে বসানো ডাইনিং টেবিল, সেটিও তৈরি কাগজের।

এছাড়াও সাদা থার্মোকল দিয়ে বানানো জাহাজ, লোকনাথ ঠাকুরের মন্দির তাঁর বানানোর বিশেষ কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে উলের পুতুল, মহিলাদের হাতে তৈরি নিখুঁত গহনা,বিশেষ প্রকার ফুল, মাটির মূর্তি ইত্যাদি। এই সকল ছাড়াও তার নেশা রয়েছে ছবিতেও। আর্ট পিকচার বানানোও তাঁর অন্যতম সখ।

এ যেন অবাক করা বিষয়! কোনও প্রশিক্ষণ নয়, কেবলমাত্র নিজের ইচ্ছে এবং প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অসামান্য একের পর এক সৃষ্টি করেন মানিক লাহিড়ি। মানিকের বাড়ি বিরাটির মহাজাতিনগরে। কমলাপুর বয়েজ স্কুল থেকে পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে সরকারি কাজে যোগ দেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর আগে ব্যক্তিগত কারণে ছাড়তে হয় সরকারি কাজ। তারপরেই পরিবারে নেমে আসে অভাব,সেই থেকেই পড়ানো টিউসানি। তবে সময় বাঁচিয়ে নিজের পুঁজি থেকেই একটু একটু করে গড়ে তোলা তাঁর শখের কালেকশন। শুরুতে স্ত্রী ও মায়ের দায়ভার সামলে কাজ শুরু করা ছিল কঠিন। তবু ছোট্ট সংসারে কোনক্রমে পেট ভরিয়ে হলেও বাঁচিয়ে রেখেছেন প্রতিভাকে।

এই কালেকশনকে ভবিষ্যতে আরো বড় জায়গায় পৌঁছানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে মানিকের, যার জন্য দরকার সাহায্যের। নিউজপোলের মুখোমুখি হয়ে সেই আবেদনই জানিয়েছেন শিল্পী।