সাহায্যের বুট পরেই সুপ্রিয় এখন সন্তোষ জয়ী

ক্রীড়া দেশ রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: সন্তোষ ট্রফিতে কেরলকে হারিয়ে ৩৩ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। বাংলাকে গোল করা ফুটবল দলের প্লেয়াররা বাংলার মাটিতে পা রাখতেই তাঁদের বিভিন্ন মহল থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেন এবং প্রত্যেক ফুটবলারদের জন্য চাকরির ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলা দলের ফুটবলার হুগলির নালিকুল বন্দিগ্রামের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী সুপ্রিয় পণ্ডিত। গ্রামের সবার তাঁকে বাবাই বলে চেনেন। সুপ্রিয় এখন বাংলা সহ হুগলির গৌরব হয়ে উঠেছে।

সুপ্রিয়র এই জায়গায় আসার পথ এত মসৃণ ছিল না। এরজন্য তাঁকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রথমে পাড়ার মাঠ থেকে বৈদ্যবাটী কৃষ্টিচক্র, কলকাতার রেনবো, ভবানীপুর, পিয়ারলেস প্রভৃতি দলের হয়ে খেলেছেন সুপ্রিয়। বর্তমানে তিনি ডায়মন্ড হারবার ফুটবল দলের হয়ে খেলছেন। সুপ্রিয় জানান, ‘ছোট থেকেই কষ্ট করে বাবা আমাকে মানুষ করেছেন, যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। এবারে সন্তোষ ট্রফি খুব কঠিন টিম ছিল আমাদের গ্রুপে। সেখানে কাশ্মীর, রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মত কঠিন টিমের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। তবে প্রতিপক্ষ যতই শক্ত হোক না কেন আমরাও ছাড়বার পাত্র ছিলাম না। ১০০ শতাংশ দিয়ে আমরা লড়াই করেছি। আমাদের দলের ক্যাপ্টেন সবসময় আমাদের সাহস জুগিয়েছে। তিনি বলতেন, বাংলার প্রতিটি মানুষের ভরসা আমাদের ওপরে তাই আমাদেরকে এ লড়াই লড়ে যেতে হবে। খেলার প্রথমে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল তারপর একটার পর একটা ম্যাচ জেতার পরে আমাদের এক আলাদাই শক্তি চলে আসে। আমি দলের জন্য লড়াই করেছি কিন্তু দলের হয়ে গোল করতে পারিনি ফাইনালে এটাই আমার আক্ষেপ। বাংলার দলের প্রতিটি ছেলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি ঘোষণা করেছেন এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’

ছেলের সাফল্যে মায়ের চোখ অশ্রুসিক্ত। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। আমি সর্বদা ঈশ্বরের ওপর ভরসা রেখেছি, জানি এক দিন না একদিন ছেলে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। ছেলের সাফল্যে আমারা খুবই আনন্দিত। এখন ঈশ্বরের কাছে একটাই চাওয়া আমার ছেলে অনেকদূর যাক।’ সুপ্রিয়র বাবা কাশিনাথ পণ্ডিত ছেলের সাফল্যে চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়, সংসার চালাতে পারতাম না ঠিকমত। দিনের জন্য বুট কেনার মত পয়সা ছিল না।‌ অন্যের জমিতে চাষ করে সংসার চালাতাম। খেলার জন্য ছেলেকে অনেক বকাবকি করতাম কিন্তু এখন ওর জন্য আনন্দ হচ্ছে।’

ছোটবেলায় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের দলের খেলা দেখতে ভালোবাসতো সুপ্রিয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর ফুটবলের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। যখন ওই সময় পেতো তখনই মাঠে গিয়ে ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস চলত। আর্থিক অবস্থার জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নের প্রতি অবিচল ছিলেন। আর আজ ফলস্বরূপ সারা বাংলা তাঁর জন্য গর্বিত।