দূষণের জন্য দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের

আন্তর্জাতিক কলকাতা জেলা দেশ রাজ্য

নিউজ পোল ব্যুরো:- শীতের মরশুম শুরু হতেই আলিপুরদুয়ার শহরের বিভিন্ন ঝিলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রতিবছর শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এই পাখিরা আলিপুরদুয়ারের ঝিলগুলিতে ভীড় জমায়। শীত শেষ হলেই তাঁরা আবার ফিরে যায় নিজেদের আবাসস্থলে। শীতের সময়ে আলিপুরদুয়ারের ঝিলগুলিতে এই পাখিদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য বহু প্রকৃতিপ্রেমী ভীড় করেন। তবে দুঃখজনক ভাবে, বিগত কয়েক বছরে এই ঝিলগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ারের ঝিলগুলির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দূষণই এর প্রধান কারণ। ঝিলগুলিতে পর্যাপ্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবের ফলে সেগুলি ধীরে ধীরে কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। এর ফলে পাখিদের খাদ্য এবং বাসস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনকে দিন।

পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, শীতের সময় বিভিন্ন ঝিলে সরাল, বালিহাঁস এবং ব্রাহ্মণী হাঁসের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের দেখা যায়। এছাড়া, কিছু শিকারি পাখি যেমন ওরপ্রে বা মেছো ইগল এবং ব্ল্যাক ইগলও মাঝে মাঝে ঝিলগুলোতে ভেসে বেড়ায়। তবে আলিপুরদুয়ার জেলার মায়া টকিজের ঝিলটি প্রধানত সরাল এবং বালিহাঁসের আবাসস্থল হিসেবেই পরিচিত। এই ঝিলে ডাউক বা পানকৌড়ির মতো কিছু স্থানীয় পাখিরও দেখা মেলে। পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত শীতের শুরুতে এখানে আসে। তাঁরা তিন থেকে চার মাস এই ঝিলেই থাকে। শীতের শেষে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে, তাঁরা আবার নিজের দেশে ফিরে যায়।
একসময় আলিপুরদুয়ার শহরের আশপাশের ঝিল এবং ডীমা ও কালজানি নদীতে শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মিলত। সাইবেরিয়া সহ শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা কমে গেলে এই পাখিরা উষ্ণ পরিবেশের খোঁজে প্রতিবছর এই অঞ্চলে চলে আসত। আবার মার্চ মাসের দিকে তাঁরা ফিরে যেত।

কিন্তু বর্তমানে ডীমা ও কালজানি নদী দূষণের কবলে পড়েছে। নদীর জলের গুণগত মানও কমে যাওয়ার ফলে সেখানে আর পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না। একইসঙ্গে শহর সংলগ্ন বেশিরভাগ ঝিল সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে। ফলে এই পাখিদের বাসস্থান কমে গিয়েছে এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। তবে এখনও কিছু ঝিল ঠিক আছে, যেখানে কচুরিপানার আধিপত্য কম। ওইসব ঝিলে পরিযায়ী পাখিদের আসতে দেখা যায়। পরিযায়ী পাখিদের এই পরিস্থিতি রোধে এবং তাঁদের আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন বলই মনে করেন পশুপ্রেমীরা।