নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: হাতির বদলে ঘোড়া! অকাল বিশ্বকর্মা পুজোয় মেতে উঠল চণ্ডীতলার বেগমপুর। তাও আবার পৌষ মাসে। পৌষ মাসের শুক্লা পক্ষের নবমী তিথি অনুযায়ী বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের বিশ্বকর্মা পুজো।
জানা গিয়েছে, প্রায় ৭০ বছর আগের কথা। বেগমপুরের ছোটো তাজপুর কাঁঠালতলা গ্রামের দুই তন্তুবায় ছবি সেন এবং নিমাই কুণ্ডু প্রথম পৌষ মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে বিশ্বকর্মা পুজো শুরু করেন। দুর্গাপুজোর ৯০ দিন পর এই পুজো শুরু হয়।প্রতি বছরের মত এইবছরও অকাল বিশ্বকর্মা পুজোয় মেতেছে হুগলির চণ্ডীতলার বেগমপুর, ছোটোতাজপুর, দক্ষিণ খরসরাই ও মনিরামপুর গ্রামের মানুষজন। আজ বুধবার থেকে চারদিন ব্যাপী চলবে এই পুজো। পুজোকে ঘিরে বসেছে মেলা। এদিন গ্রামের সকলে একত্রিত হয়ে সরস্বতী নদীর ধারে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। এইবছর ক্লাব ও বাড়োয়ারী মিলে মোট ২৯ টি পুজো হচ্ছে এলাকায়। সকাল থেকে প্রতিটি তাঁতঘরে চলছে তাঁত পুজো।
এই পুজোর পর থেকে শুরু হয়ে যায় দুর্গোপুজোর জন্য শাড়ি বুননের কাজ। তাই ভাদ্রমাসে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় গ্রামে তাঁতঘরগুলোতে ব্যস্ততার জন্য তাঁরা ভাদ্র মাসে বিশ্বকর্মা পুজো করতে পারেন না। তাই এই অকাল বিশ্বকর্মা পুজোতে মেতে ওঠে আট থেকে আশি সকলেই। তবে এই বিশ্বকর্মার বাহন হিসেবে হাতির বদলে ঘোড়া থাকে। কারণ, ঘোড়ার খুঁড়ের খটখট শব্দের সঙ্গে তাঁতের মাকুর শব্দের মিল থাকার কারণে হাতির বদলে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়া করা হয়। প্রতিমা, মন্ডপ সজ্জা, আলোর রেশনাই একে অপরকে টেক্কা দিলেও প্রদীপের নীচের অন্ধকার গ্রাস করেছে তাঁতশিল্পীদের। আগে বেগমপুর এলাকায় পাঁচ হাজার জন তাঁত শিল্পী এই পেশায় যুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে রোজগার কমে যাওয়ার কারণে নতুন প্রজন্ম এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম কেউ এই হস্তচালিত তাঁত পেশায় আসেনা। মনে সেই আগের মতন উচ্ছাস, আনন্দ নেই।
তাঁত শিল্পী কাশীনাথ সেন বলেন, দুর্গা পুজোতে সময় থাকে না, তখন শিল্পীরা শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে তাই অসময়ে বিশ্বকর্মা পুজো করা হয়। এটা তন্তুবায় সম্প্রদায়ের পুজো। ঘোড়ার খুরে খট খট করে আওয়াজ হয় তাই বিশ্বকর্মার বাহন হাতির বদলে থাকে ঘোড়া। এই পুজোর পর থেকেই আবার জোর কদমে চলে দুর্গাপুজোর শাড়ি তৈরীর কাজ।
পুরোহিত তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, পৌষ মাসের শুক্লাপক্ষে নবমী তিথিতে প্রতিবছর এই পুজো হয়। খরসরাই ,বেগমপুর, তাজপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় এই পুজো জাঁকজমক সহকারে হয়ে থাকে। ভাদ্র মাসে বিশ্বকর্মা পুজোর বাহন হাতি, হাতি যেভাবে চলে তার সঙ্গে হাতুড়ির তুলনা করা হয় তাই বিশ্বকর্মার বাহন হয় হাতি । তবে পৌষ মাসের এই বিশ্বকর্মা পুজোর বাহন খোড়া। ঘোড়ার খুরের সঙ্গে মাকুর আওয়াজ কিছুটা এক হওয়ায় এই পুজোতে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়াকে দেখানো হয়।