তাবাকোশিই হোক আপনার গন্তব্যের আসল ঠিকানা

জেলা ভ্রমণ রাজ্য

নিউজ পোল ব্যুরো:- সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা—যেখানে দার্জিলিংয়ের মেঘে ঢাকা পাহাড়ের কোলে এক পরিবারের সম্পর্ক, দ্বিধা এবং জীবনের বিভিন্ন বাঁকের গল্প উঠে আসে। সেখানকার শীতল বাতাস, পাহাড়ি পরিবেশ আর চরিত্রদের আবেগের কাহিনি আমাদের আজও মুগ্ধ করে। তেমনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা শেষের কবিতা, যেখানে অমিত আর লাবণ্য দুই বিপরীতধর্মী চরিত্রের মধ্যে জীবনের গভীর অর্থ আর একে অপরের প্রতি ভালোবাসার গল্প ধরা পড়ে। গল্পের প্রতি বাঁকে বাঁকে থাকে তর্ক, ভালোবাসা, এবং বিদায়ের গভীর দৃষ্টি। এই কাহিনিগুলো জীবনের বাঁকে বাঁকে থমকে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু ভাবুন তো, এমন এক গ্রাম যেখানে নেই কোনও বাঁক, যেখানে শুধুই সবুজের খেলা, পাখির গুঞ্জন, আর প্রকৃতির কোলে নিরিবিলি সময় কাটানোর এক অদ্ভুত সুখের অনুভূতি। যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে, শান্ত পরিবেশে কিছুদিন কাটানোর জন্য তাবাকোশি হতে পারে আপনার অন্যতম এক আদর্শ গন্তব্যস্থল।

দার্জিলিং জেলার একটি ছোট্ট এবং নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রাম তাবাকোশি। মিরিক থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি প্রকৃতিপ্রেমী, ফটোগ্রাফার, এবং অফবিট পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। চা বাগান, কমলালেবু গাছ, পাহাড়ি নদী, আর চারপাশের সবুজের শোভা তাবাকোশিকে করে তুলেছে অতুলনীয়। এই ছুটিতে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য তাবাকোশি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।

দার্জিলিং, কালিম্পং বা সিকিমের মতো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের বাইরে অনেকেই নিরিবিলি এবং অফবিট জায়গায় যেতে পছন্দ করেন। তাবাকোশি এমনই এক জায়গা যেখানে নেই কোনও কোলাহল, আছে শুধু প্রকৃতির কোলে সময় কাটানোর দারুণ সুযোগ। এই গ্রামটি চা বাগান আর রংভং নদীর পাশে অবস্থিত। এছাড়া রাম্মামখোলা নদীর সৌন্দর্য এই পাহাড়ি গ্রামের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

কলকাতা বা অন্য যে কোনও শহর থেকে প্রথমে শিলিগুড়ি যেতে হবে। শিলিগুড়ি থেকে তাবাকোশি পৌঁছনোর জন্য শেয়ার গাড়ি বা বাইক ব্যবহার করতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে মিরিক পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা। মিরিক থেকে রংভং মোড় পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং সেখান থেকে তাবাকোশি যাওয়ার জন্য আরও ৫০ টাকা ভাড়া পড়বে। শিলিগুড়ি থেকে তাবাকোশি পৌঁছতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। মিরিক থেকে তাবাকোশি মাত্র ৮ কিমি দূরে। আপনি চাইলে আপনার নিজের গাড়ি বা শেয়ার গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি তাবাকোশি পৌঁছে যেতে পারেন।

তাবাকোশিতে বেশ কয়েকটি সুন্দর হোম-স্টে রয়েছে। প্রতিদিন মাথাপিছু খরচ ১২০০-১৫০০ টাকা, যাতে তিন বেলার খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত। যদি একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাহলে তাঁবুতে রাত কাটানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। তাবাকোশি থেকে পার্শ্ববর্তী আরও কিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন।

এই ভ্রমণ স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে লেপচা জগৎ, গোপালধারা চা বাগান, পশুপতি ফটক, ওকায়টি চা বাগান ইত্যাদি। প্রকৃতির কোলে দিন কাটানো, পাহাড়ি নদীর সুরে মুগ্ধ হওয়া, চা বাগানের সবুজে হারিয়ে যাওয়া, এবং পাহাড়ি পথে হাঁটার আনন্দ আপনার মনকে সতেজ করে তুলবে। তিন থেকে সাতদিন কাটানোর জন্য তাবাকোশি এক আদর্শ জায়গা।