নিউজ পোল ব্যুরো : আজকের দিনে অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সাল সকাল ৬টা বেজে ৩৩ মিনিট মকর সংক্রান্তির দিন কলকাতার দত্ত বাড়িতে শাঁখ বেজে উঠল, জন্ম নিলেন এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যার নাম স্বামী বিবেকানন্দ। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন, মা ‘শিব’, ‘শিব’ বলে চিৎকার করতেন ও ছোট বিলে শান্ত হতেন। তিনি বিজ্ঞান ও ধর্মের সমন্বয় করেছিলেন। এই ছেলেই প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে ঈশ্বর সন্ধান করতেন ও পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সন্ধান পান ও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং সনাতন ধর্ম ও বেদান্তের প্রচার করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য দেশে গিয়ে ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রচার করেন। তাঁর বিখ্যাত শিকাগো সভায় বলা কথা গুলি আজও প্রতিটি ভারতবাসীর মনকে আনন্দিত করে। ভারতবাসীর ভেতরে যে শিক্ষার অভাব আছে, তা তিনি বুঝেছিলেন তাই ভারতবাসীকে বলেছিলেন – হে ভারত, ভুলিও না, হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা—এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে? এই লজ্জাকর কাপুরুষতাসহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে? হে ভারত, ভুলিও না—তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী, ভুলিও না—তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর; ভুলিও না—তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের—নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে; ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ বলির জন্য বলিপ্রদত্ত; ভুলিও না—তোমার সমাজ সে বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র; ভুলিও না—নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই! হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল—মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই; তুমিও কটিমাত্র-বস্ত্রাবৃত হইয়া, সদর্পে ডাকিয়া বল—ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমাদের আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই—ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, আর বল দিনরাত, ‘হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও; মা, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দূর কর, আমায় মানুষ কর।’
শিবজ্ঞানে জীবসেবা করার মাধ্যমেই চরিত্রের উন্নতি হতে পারে বলে ভাবতেন তিনি। নারী জাতীকে বহু সময়ে তিনি জাগিয়ে তুলেছেন। তাঁর দেখানো মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষা বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে মনোবল যুগিয়েছিলেন। বাঘাযতীন স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। রাসবিহারী বসুর কাছে স্বামীজী প্রাণপুরুষ ছিলেন।
নেতাজী বলেছিলেন -স্বামীজী র লেখা পড়ার পরে তাঁর ভিতরে যেন সব কিছু উথাল পাতাল হয়ে গেছিল, এক বিপ্লব খেলে গেছিল তাঁর মনে। স্বামীজী বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা হল আত্মার সংগীত ‘ । নিকোলা টেসলা ও স্বামীজীর সাক্ষাতের ঘটনাটি আজও বিশেষ বার্তা দেয় আমাদের। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী স্বামীজী সংগীত প্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি বেশ কিছু গীতি লিখেছিলেন যেমন – “The Song of Sannyasian”, ‘খন্ডন ভব বন্ধন’, ‘কালী দি মাদার’ ইত্যাদি। স্বামীজীকে একটি বাক্যে ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন।
তবুও একটি বাক্য পাই আমরা স্বামীজী অনুরাগী আরেক মহাপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর লেখায়। স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন -“বিবেকানন্দের কথা বলতে গেলে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। কে বুঝবে তাঁকে -কে বুঝেছে তাঁকে? অসম্ভব। সুগভীর তিনি, জটিল, ঋদ্ধময়। ত্যাগে বেহিসেবী, কর্মে বিরামহীন, প্রেমে সীমাহীন, জ্ঞানে সমুদ্রগভীর, সমালোচনায় অগ্নিবর্ষী, আর সারল্যে -শিশু -একেবারে শিশু। এ জগতে তাঁর তুল্য কেউ নেই, কেউ নয় …আমি কে, যে বলব তাঁর কথা?”