নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জাল শংসাপত্র, সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাই কোর্টের। ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। পাশাপাশি বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্যের স্বীকারোক্তি ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পূর্বে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী সংক্রান্ত কোনও নথি রাজ্যের কাছে নেই।
রামলাল মাইতি ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা। তাঁর পুত্র শুকদেব মাইতি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আবেদন জানান। পুত্রের দাবি, তাঁর পিতা রামলাল মাইতি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৯৪৩-৪৪ সালে তাঁর বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী হওয়ায় আন্ডার গ্রাউন্ডে ছিলেন। তাই তাঁর পিতা স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরর জন্য দেওয়া পেনশনের অধিকারী।
বর্তমানে রামলাল মাইতি ও তাঁর স্ত্রী উভয়েই মৃত। তাঁর পুত্র উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশনের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আবেদনকারীর আরও দাবি, তাঁর পিতা যে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন তাঁর শংসাপত্র দিয়েছিলেন অপর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী আর এন গিরি।
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল জানান, আরএন গিরি নিজে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন এটা ঠিক এবং তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে পেনশন পেতেন। তিনি আবার ১৯৪২-৪৩ সময় কাল উল্লেখ করে বহু ব্যক্তিকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর সার্টিফিকেট প্রদান করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের মামলা চলাকালীন দেখা যায় আর এন গিরি সারাদেশে প্রায় ২২০০ জনকে অবৈধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীর সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সুপ্রীম কোর্ট এই জাল সার্টিফিকেটের জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করেছে।
রাজ্যের আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় জানান, হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ১৯৪৩-৪৪ সালে রামলাল মাইতির বয়স ছিল ১৩ বছর। এছাড়াও ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পূর্বে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংক্রান্ত কোনও নথি রাজ্যের কাছে নেই। রামলাল মাইতি যে স্বাধীনতা সংগ্রামী তার একমাত্র নথি হচ্ছে আর এন গিরির দেওয়া সার্টিফিকেট। এরই মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট আর এন গিরির দেওয়া সারা দেশে ২২০০ সার্টিফিকেট এর ওপর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করেছে। তাই ওই সার্টিফিকেটের কতটা বৈধতা আছে সে বিষয়ে সন্দিহান।
প্রধান বিচারপতি জানান, সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যদি দেখা যায় সিবিআই তদন্তে আর এন গিরির দেওয়া সার্টিফিকেট জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে তাহলে এক্ষেত্রে এই আবেদনের কোন সারবর্তা নেই। তাই ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে রামলাল মাইতির অবস্থান সম্পর্কে এবং সিবিআইয়ের তদন্ত সম্পর্কে একটি রিপোর্ট নামার মাধ্যমে কলকাতা হাই কোর্টে পেশ করতে হবে।
উল্লেখ্য, একক বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রামলাল মাইতির পুত্র শুকদেব মাইতিকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছিলেন এবং রাজ্য সরকারকে জরিমানা করেছিলেন।