ড্রাগনের নিঃশ্বাসের কড়া জবাব মোদীর

দেশ

নিউজ পোল ব্যুরো: জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল। এর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী হল। ভারতের এই সুরঙ্গ পথের সাহায্যে চীনের চোখ রাঙানিকে কিছুটা হলেও কড়া জবাব দেওয়া হল বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল। পর্যটনের পাশাপাশি এই এলাকায় প্রতিরক্ষা রসদ সহজেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। জম্মু ও কাশ্মীরে একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হিসেবে এই সুরঙ্গ কাজে আসবে বলে মনে করছে মোদী সরকার।

প্রতিরক্ষা, অর্থনীতির জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বাড়াবে এই টানেল। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নীতীন গড়করি। তিনি বলেন, ‘এই টানেলে প্রতি ঘণ্টায় ১হাজার যানবাহন চলার ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অত্যন্ত কৌশলে তৈরি করা হয়েছে এই টানেল। তুষারপাত সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে জীবন রক্ষা করবে এই সুরঙ্গ। এর পাশাপাশি, এই টানেল স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে। গান্ডেরওয়ালের বাসিন্দারা আশাবাদী, টানেলটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং বেকারত্ব মোকাবিলায় সাহায্য করবে। এখন থেকে পর্যটকরা সারা বছরেই সোনামার্গে আসতে পারবেন।’

আগে এই অঞ্চলটি তুষারপাতের কারণে বছরের চার মাস বিচ্ছিন্ন থাকত। এখন শুধু সোনামার্গ নয়, দ্রাস ও কার্গিলের মতো এলাকাগুলি এর মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। এই এলাকার মানুষ দরিদ্র, কিন্তু এই টানেল এখন সারা বছর জীবিকার সুযোগ করে দেবে বলে দাবি করেন গড়করি। অপরদিকে, বহুদিন আগেই সীমান্তে পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দিচ্ছিল চীন। তাই দেরি না করে সেনাবাহিনীর যোগাযোগের পথ সুগম করতে ভারতও পিছিয়ে থাকল না। জম্মু ও কাশ্মীরের গান্ডেরওয়াল জেলায় ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জেড-মোর টানেল তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের গন্দেরবল জেলায় সোনমার্গ সুড়ঙ্গ, যা জেড মোড় সুড়ঙ্গ নামেও পরিচিত, তার উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২,৪০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প লাদাখ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।

জেড মোড় সুড়ঙ্গ প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় নির্মিত। শ্রীনগরের সঙ্গে সোনমার্গের যোগাযোগ আরও উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই সুড়ঙ্গ। বর্ষা বা শীতকালেও এই পথ চালু থাকবে, যা আগে জেড আকৃতির বিপজ্জনক সড়কে সম্ভব ছিল না। এই সড়ক তুষার ধস প্রবণ হওয়ায় প্রায়শই বন্ধ থাকত। সুড়ঙ্গ পথটি চালু হওয়ায় প্রায় দু’ঘণ্টার পথ মাত্র ১৫ মিনিটে অতিক্রম করা যাবে। এতে রয়েছে মোট দু’টি লেন, যার প্রতিটি ১০ মিটার চওড়া। জরুরি অবস্থার জন্য রয়েছে সাড়ে সাত মিটারের আলাদা রাস্তা। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।

জেড মোড় সুড়ঙ্গ প্রকল্প ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল জোজিলা সুড়ঙ্গ প্রকল্পের একটি অংশ হিসাবে। পুরো প্রকল্পের লক্ষ্য শ্রীনগর ও লাদাখের মধ্যে সারা বছর নির্বিঘ্নে যোগাযোগ স্থাপন করা। ২০২৮ সালের মধ্যে জোজিলা সুড়ঙ্গের নির্মাণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সুড়ঙ্গটি সোনমার্গকে সারা বছর পর্যটকদের জন্য খোলা রাখতে সহায়ক হবে। ফলে সেখানকার পর্যটন শিল্প, বিশেষ করে স্কি রিসর্টের মতো উচ্চমানের সুবিধা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। শীতকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর সোনমার্গ ছেড়ে চলে যেতে হবে না। কার্গিল ও লে থেকে শ্রীনগরের যাত্রাপথও সহজ ও দ্রুততর হবে।

সুড়ঙ্গ উদ্বোধনের সময় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরবাসীর প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। নির্বাচিত সরকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে।’ উদ্বোধনের প্রস্তুতির সময় সমাজ মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘জেড মোড় সুড়ঙ্গ সোনমার্গকে সারাবছর পর্যটনের জন্য খুলে দেবে। উন্নত পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে উঠবে, এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’