নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : আমি সভাপতি, আমিই দশ বছর দল চালাব। পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক নেতাদের বড় বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বৈঠকে ফোনে এই মর্মে বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। এর আগে জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, দলের সম্পদ তাঁর হাতে। কালীঘাটে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বয়স্কদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সেই বৈঠকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, তিনি সভাপতি এবং দল চালাবেন।
পরে তিনি আবার বিধানসভায় বিধায়কদের সঙ্গে বসেন। সেখানেও তিনি বলেন, ‘আমি আর বক্সী দা দলের হাল ধরব।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তার সারমর্ম হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল পরিচালনায় বড়দের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বুধবার কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক নির্বাচনের পর পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়কদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট ফোনে কথা বলেন মমতা।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আরও ভাবুন, আমি দলের সভাপতি, আমিই দল চালাব। আমি এটি দশ বছর ধরে চালাব।’ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলে ‘নবীন বনাম প্রবীণ’ লড়াই নতুন কিছু নয়। এর পরেই, দলটি ২০২১ সালে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে এটি একটি বড় রূপ নিয়েছে। ২০২৪ সালের এই লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতেও আলোচনার বিষয় ছিল। ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিভিন্ন নেতার করা বিভিন্ন মন্তব্য শাসক দলের উপদলীয় রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দলের মহাসচিব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বলতে শোনা যায়, ‘আমি মনে করি রাজনীতিতে একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকা উচিৎ।’ একজন ৪০ বা ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তি যে পরিমাণ কাজ করতে পারেন সেই তুলনায় ৭০-৭৫ বছর বয়সের ব্যক্তিরা তা পারেন না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কাজের গতি হ্রাস পায়। আর যদি মনে হয় আমি বড়, আমি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকব, তাহলে তাঁর পতন অনিবার্য।’
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বয়সের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়, ‘আপনার বয়স কত?’ মানুষের মস্তিষ্কের কী কোনও বয়স আছে? যতদিন বাঁচবে ততদিন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো বাঁচবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিরোধী শিবিরেও তোলপাড়। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন যে, ‘তিনি এখন বলছেন যে তিনি ১০ বছর দল চালাবেন। আসলে তাঁর সামনে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে তার কারণে তিনি দলের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন এবং এখন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চান। এই নিয়ে বিরোধ চলছে। ক্ষমতা দখলের জন্য এটা পারিবারিক কলহ।’
অন্যদিকে, সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী দলে অবিসংবাদিত নন, তিনি এটি বুঝতে পেরেছেন এবং বারবার দলকে বার্তা পাঠাচ্ছেন।’