নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: ৯ আগস্ট, ২০২৪, তারপর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস, ন’ দিন। শনিবার, ১৮ জানুয়ারি কর্তব্যরত অবস্থায় জুনিয়র চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত।
৯ আগস্ট, সকাল থেকেই ভিড় ছিল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত হন ৮ আগস্ট। ৯ আগস্ট এনআরএস-এ দেহদান করা হয় তাঁর। যখন ভিড়ে ভর্তি এনআরএস, ঠিক তখনই সংবাদ শিরোণামে উঠে আসে শহরের অপর এক মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর। প্রকাশ্যে আসে কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসকের রহস্য মৃত্যুর ঘটনা।
অভিযোগ ওঠে, কর্তব্যরত অবস্থায় তার আগের রাতে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, ১০ আগস্ট সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ১৩ আগস্ট আরজি কর মামলার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। সুপ্রিম কোর্ট ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়। সিবিআই-ও ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ঘটনার একমাত্র অভিযুক্ত উল্লেখ করে চার্জশিট পেশ করে।
আগস্ট থেকেই ঘটনার রেশ স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহর, রাজ্য, দেশ এমনকি বিদেশেও। রাত দখল, প্রতিবাদ, স্লোগান ও বিচারের দাবি দিনে দিনে তীব্র হয়। একদিকে পথে নামেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে পদত্যাগ দাবি তোলেন স্বাস্থ্য কর্তা, কলকাতা পুলিশ কমিশনারের। জুনিয়র চিকিৎসকেরা নিজেদের দাবি নিয়ে কখনও ধর্নায় বসেন লালবাজারের সামনে, কখনও স্বাস্থ্যভবনের সামনে।
কর্মবিরতি, ধর্না তুলে নিতে আন্দোলকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসে রাজ্য সরকার। বৈঠক করেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, স্বাস্থ্য ভবনের ডিএমই কৌস্তভ নায়েক, ডিএইচএস দেবাশিস হালদারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই পরিস্থিতিতে কলকাতার নতুন নগরপাল হন মনোজ বর্মা।
৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর অনশন প্রত্যাহার ২১ অক্টোবর। ১১ নভেম্বর থেকে সিবিআই-এর দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতেই চলেছে বিচার। ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত ঘোষণা করল, আর জি কর কাণ্ডে একমাত্র দোষী সঞ্জয় রায়ই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪(ধর্ষণ), ৬৬(ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩(১) (খুন) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মামলার রায় আগামী সোমবার। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, সঞ্জয় রায় এদিন বলে, সে নির্দোষ।
এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা তারপর সোমবার বেলা সাড়ে বারোটায় সাজা ঘোষণা হবে সঞ্জয় রাইয়ের।