মহাকুম্ভে ১২৫ বছরের স্বামী শিবানন্দ বাবা

আন্তর্জাতিক দেশ

নিউজ পোল ব্যুরো:- ভারতের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসে কুম্ভমেলা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার গভীর প্রবাহে ডুব দেওয়ার এক অনন্য উপলক্ষ। ১৪৪ বছর পর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলায় যোগ দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং সাধু- সন্ন্যাসীরা। তবে তাঁদের মধ্যে একজন রয়েছেন যিনি গত ১০০ বছর ধরে প্রতিটি কুম্ভমেলায় যোগ দিয়েছেন। তিনি হলেন ১২৫ বছর বয়সি পদ্মশ্রী প্রাপক বিখ্যাত যোগ অনুশীলনকারী স্বামী শিবানন্দ বাবা। প্রতিবারের মতো এবারও তিনি মহাকুম্ভে যোগ দিয়েছেন।

যোগ এবং তপস্যার ওপর ভিত্তি করে স্বামী শিবানন্দের সরল জীবনযাপন লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। সূত্রের খবর, স্বামী শিবানন্দ বাবা একজন ভিক্ষুক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবার বয়স যখন চার বছর, তখন তাঁর পরিবার তাঁকে সাধু ওঙ্কারানন্দ গোস্বামীর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। সাধুর অনুরোধে, স্বামী শিবানন্দ ৬ বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ফিরে আসেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত, তিনি ফিরে আসার পর তাঁর বোন মারা যান এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি বাবা-মা দুজনকেই একসঙ্গে হারান। এক চিতায় তিনি দাহ করেন তাঁর বাবা-মাকে। এসবের পরে তাঁর একমাত্র অভিভাবক হয়ে দাঁড়ান ওঙ্কারানন্দ গোস্বামীই।

স্বামী শিবানন্দ বাবার জীবন আগাগোড়া অতি সাধারণ। বারাণসীর কবীর নগরের বাসিন্দা শিবানন্দ বাবা সিদ্ধ খাবার খান, নুন-তেল ছাড়া। দুধ বা দুধের সমস্ত প্রোডাক্ট তিনি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তাঁর শিষ্যরা জানান, চার বছর বয়স পর্যন্ত বাবা কখনও দুধ, ফল বা রুটি দেখেননি। এই সব জিনিসগুলিই তাঁর জীবনধারাকে বদলে দিয়েছিল। তিনি অর্ধেক খাবার খান, রাত ৯ টার মধ্যে ঘুমান, সকাল ৩ টায় ঘুম থেকে ওঠেন এবং সকালটা যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করে কাটান। তিনি দিনের বেলা ঘুমোন না। রোজই ধ্যান, জপ, যোগাসন- এইসবের মধ্যেই তিনি থাকেন। তিনি আরও জানান, চণ্ডীগড়ে একটি ভবনের ষষ্ঠ তলায় লিফট থাকা সত্ত্বেও বাবা প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে উঠতেন।

শিষ্যরা বাবার গভীর আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, যখন একজন ভক্ত আসার পরে ক্ষুধার্ত ছিলেন তখন বাবা মাটির পাত্রে ক্ষীর পরিবেশন করেন। তবে ক্ষীর অল্প থাকায় বাবা তাঁকে খেয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু, তিনি ক্ষীর শেষ করতে পারেননি। তখন ওই ভক্ত বাবার পায়ে পড়ে চিৎকার করে বললেন, “বাবা, আমি আপনাকে বুঝতে পারিনি।” একজন ভক্ত স্বামী শিবানন্দকে আবেদন ছাড়াই পদ্মশ্রী দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। স্বামী শিবানন্দের শিষ্যরা তাঁর সরলতা এবং ভক্তিমার্গের কথা তুলে ধরেন। তিনি কোনও দান গ্রহণ করেন না। স্বামী শিবানন্দের জীবন আধ্যাত্মিকতার মূর্ত প্রতীক। মহাকুম্ভ মেলায় তাঁর উপস্থিতি প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং যোগচর্চার প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহ আরও জোরদার করেছে।