নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: – আমৃত্যু কারাদণ্ড হল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক এবং ধর্ষণ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সোমবার দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। গত শনিবারের শুনানিতে আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪(ধর্ষণ), ৬৬(ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩(১) (খুন) ধারায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
সোমবার ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল আদালত চত্বর, সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না এদিন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় সঞ্জয় রাইকে। কোর্ট চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল পুলিশ বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিকরা। ৮০ জন মহিলা পুলিশ আধিকারিকও ছিলেন সোমবার নিরাপত্তার দায়িত্বে।
শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর কোর্টরুমে বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে ১২টা ৫৭ মিনিট নাগাদ নিয়ে আসা হয় সঞ্জয়কে। বিচারপতি তাঁকে বলেন, ”ধর্ষণকালীন আঘাতে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার।” এর পরই সঞ্জয়ের পরিবার সম্পর্কে জানতে চান বিচারক। সঞ্জয়কে প্রশ্ন করা হয় তিনি আর কিছু বলতে চান কি না? উত্তরে সঞ্জয় বলেন, ”খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় আমি জড়িত নই। আমায় ফাঁসানো হয়েছে।” সিবিআইয়ের আইনজীবী আরজি করের ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেন। যদিও সঞ্জয়ের আইনজীবী সেই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।
শনিবার মাত্র ১২ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক জানান, সাক্ষীদের বয়ান, তদন্তকারী সংস্থার তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে আদলতে দাবি করেন তিনি। এও বলেন যে, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। শনিবার সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার পর বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নির্যাতিতার বাবা এবং মা। তাঁরা এজলাসে দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেলেন।
গত ৯ অগস্ট আর জি কর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাঁকে। এরপর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।
গত ৭ অক্টোবর আরজি কর-কাণ্ডে প্রথম চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। সেখানে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকেই মূল অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়। সিবিআইয়ের দাবির বিরোধিতা করে আদালতে ধৃতের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেল এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তই নন। গোটা ঘটনাটি সাজানো। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে অভিযুক্তকে। সিবিআই জানিয়েছিল, এই ঘটনার তদন্তে যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে এক জনই অভিযুক্ত। এক জনের পক্ষেও যে ওই ঘটনা সম্ভব, তা বলা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রিপোর্টেও। কয়েকদিন আগেই নতুন করে তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ ছিল,পুলিশ ও সিবিআই প্রমাণ লোপাট করছেন।
১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আরজি করের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া। টানা ৬০ দিন চলে শুনানি। আদালতে ধৃতের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে সিবিআই। আরজি করের সেই ন্যক্কারজনক ঘটনার ১৬২ দিন পর ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদহ আদালত। ২০ জানুয়ারি তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস।
যদিও এরপরেই সঞ্জয় রায়ের আইনজীবীরা সেজুতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন চলতি মাসেই তারা এই রায়কে চ্যালেঞ্জে জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন।