নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: প্রথমবার বিশ্বকাপ আর প্রথমবারেই বাজিমাত! বাবা দিনমজুর। টিনের চাল দেওয়া বাড়ি। জুটত না খাবার। খেলার জুতো বা পোশাক কেনা বিলাসিতা। আর সেই ছেলেই খো খো বিশ্বকাপ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আনন্দে চোখে জল দিনমজুর বাবার।
এবার প্রথমবার দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হল খো খো বিশ্বকাপ। ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারি বসেছিল খো খো বিশ্বকাপের আসর। পুরুষ মহিলা দল অংশগ্রহণ করেন এই খেলায়। পুরুষদের ২০ টি দল ও মহিলাদের ১৯ টি দল তাতে অংশগ্রহণ করেন। পুরুষ এবং মহিলা দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনাল খেলায় ভারতীয় দল নেপালকে ৫৪-৩৬ পয়েন্টে পরাজিত করে। আর সেই পুরুষ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন হুগলির সুমন বর্মন।
হুগলির চুঁচুড়া মিলন পল্লীর বাসিন্দা সুমন বর্মন। ছোট থেকেই পারদর্শী খেলাধুলোতে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তাঁর পরিবারের। সুমনের বাবা রামদেব বর্মন দিনমজুর, মা সুজাতা বর্মন পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ে।বড় ছেলে মূক বধির। পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁদের। কিন্তু সুমনের খেলার প্রতি আগ্রহ তাও কমেনি। পাড়ার বাঘাযতীন মাঠে তাঁর প্রথম খো খো খেলা শুরু। বর্তমানে ব্যান্ডেল হরনাথ স্কুল মাঠে প্র্যাকটিস করেন। রাজ্যে দেশে খেলে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছে সুমন। পেয়েছেন পুরস্কার আর শংসাপত্র। তবে এবার প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়। তাঁর এই সাফল্যে খুশি পরিবার। তাহলে এবার কি বিশ্বকাপজয়ীর ভাঙা ঘর ঠিক হবে? অবস্থা কি পাল্টাবে? উঠছে প্রশ্ন।
সুমনের বাবা-মা বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। পাঁচজনের সংসার টানতে অনেক কষ্ট হয়, তাও সুমনকে খেলার উৎসাহ দিয়ে গেছেন তাঁরা। খো খো খেলাতেই সুমনের বেশি আগ্রহ ছিল তাই সেটা খেলেই দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ছেলে বিশ্বকাপ জিতেছে। আশা করছি কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে এবার।
সুমনের জয়ে খুশি মিলন পল্লীর বাসিন্দা। তাঁরা জানিয়েছেন, এত বড় সাফল্যে প্রশাসন বা জন প্রতিনিধি কেউ সুমনের বাড়িতে খোঁজ নিতে আসেননি। এটা ফুটবল বা ক্রিকেট হলে হয়তো অনেকেই আসতেন। এক্ষেত্রে কোন উন্মাদনা নেই। শুধুমাত্র মিলন পল্লীর মধ্যেই আবদ্ধ। তবুও পাড়ার গর্ব সুমন বুধবার বাড়ি ফিরলে মিলন পল্লীতে ব্যান্ডপার্টি সহযোগে তাঁকে আনা হবে।