ডিভোর্স যখন পেঙ্গুইনদের

আন্তর্জাতিক

নিউজ পোল ব্যুরো-: আমরা তো ভেবেছিলাম, পেঙ্গুইনরা ‘সোলমেট গোলস’ নিয়ে জন্মায়। দু’জনে মিলে সারাজীবন একসঙ্গে কাটাবে, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভালোবাসার গল্প লিখবে। কিন্তু না, ভালোবাসার এই ধ্রুবতারা- পেঙ্গুইনদের আকাশেও জমেছে কালো মেঘ। সারা পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ডিভোর্সের হার বাড়ছে। কিন্তু এবার সেই তালিকায় যোগ দিয়েছে পেঙ্গুইনেরা! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আজীবন এক সঙ্গীর সঙ্গে প্রেমের শপথ নেওয়া পেঙ্গুইনেরাও এখন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’-এর দিকে ঝুঁকছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্কের এই নতুন ট্রেন্ড পেঙ্গুইনদের মধ্যেও থাবা বসিয়েছে। ভেবে অবাক হচ্ছেন,একেবারেই নয়। ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত ইকোলজি এন্ড এভলিউশন (Ecology and Evolution) জার্নালের একটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এই অদ্ভুত তথ্য। অস্ট্রেলিয়ার ফিলিপ আইল্যান্ডের পেঙ্গুইনদের মধ্যে ‘ডিভোর্স’ বৃদ্ধির চমকপ্রদ খবর জানিয়েছেন গবেষকরা। পেঙ্গুইনরা এখন দীর্ঘদিনের সঙ্গীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় নতুন সঙ্গীর খোঁজ করছে। অর্থাৎ কিনা পেঙ্গুইনরা ভালোবাসার পুরনো ‘কমফোর্ট জোন’ ছেড়ে বেরিয়ে নিজেদের জীবনে নতুন মোড় আনতে চাইছে।

পেঙ্গুইনরা সাধারণত রক্ষণশীল প্রেমিক। তাঁদের প্রেম একেবারে “মরণোত্তর” কাহিনীর মতো। কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিনের সঙ্গীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না তাঁদের অনেকেরই। প্রেমে ভাঁটা পড়লে যা হয়, নতুন বিকল্প খুঁজতে বেড়িয়ে পড়ছে পেঙ্গুইনরা। গত ১০ বছর ধরে পেঙ্গুইনদের আচরণে নজরদারি চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে সঙ্গীর সঙ্গে মিলনে যখন ফল মেলে না, তখনই অন্য সঙ্গীর দিকে ঝুঁকে পড়ছে তাঁরা। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সঙ্গী অদলবদলও করছে। গবেষকরা বলছেন, এই ‘ডিভোর্স প্রবণতা’-র পিছনে পরিবেশও বড়সড় ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে প্রজনন প্রক্রিয়ায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে পেঙ্গুইনরা। খাপ খাওয়ানোর চেষ্টায় তাঁদের খাদ্য সংকটও দেখা দিচ্ছে। এই সব কিছু নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খিটিমিটি লেগেই থাকছে অনেক সময়েই। আর এর ফলেই তাঁদের প্রেমের বাঁধন আলগা হয়ে যাচ্ছে।

মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষক রিচার্ড রেইনার মতে, পেঙ্গুইনদের প্রেমের ধারা বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে তাঁরা একসঙ্গে আজীবন কাটানোর পক্ষে ছিল, এখন পরিস্থিতি তাঁদের বাধ্য করছে বিকল্প সঙ্গীর খোঁজে বেরোতে। রেইনা বলেন, “সঙ্গম ঋতুতে যখন আশানুরূপ প্রজনন সম্ভব হচ্ছে না, তখন পরের ঋতুতে নতুন সঙ্গী বেছে নিচ্ছে পেঙ্গুইনরা। এটা তাঁদের বাঁচার কৌশল হতে পারে। কিন্তু এতে পেঙ্গুইন ছানার জন্মহারেও প্রভাব পড়ছে।” মানুষের মতোই, পেঙ্গুইনদের সম্পর্কেও পরিবেশ ও পরিস্থিতি বড়সড় প্রভাব ফেলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাণীজগতে এমন পরিবর্তন পরিবেশের গুরুত্ব বোঝার সময় এনে দিয়েছে। এখনই সক্রিয় না হলে, পেঙ্গুইনদের এই বিচ্ছেদ-সংস্কৃতি ভবিষ্যতে আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে। তাহলে পেঙ্গুইনদের কাছ থেকেও কি প্রেমের পাঠ নিতে হবে আমাদের? নাকি পরিবেশ বাঁচিয়ে এই মিষ্টি প্রেমিক পাখিদের চিরকালীন ভালোবাসার গল্পকে ফের ফিরিয়ে আনবো আমরা? প্রশ্নটা কিন্তু আমাদের সকলের জন্যই থেকে গেল।