নিউজ পোল ব্যুরো: ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব‘
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক চিরস্বরণীয় কিংবদন্তি নেতা। স্বাধীনতা সংগ্রামে এক অতি উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। এই সংগ্রামে নির্দ্বিধায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন তিনি। মহান দেশপ্রেমিক, শতকোটি মানুষের বীরপুত্র,যুব সমাজের অনুপ্রেরণা তিনি আর কেউ নন,দেশবাসীর অমর সন্তান নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। দেশ গৌরব নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের ওড়িশার কটক শহরে জনৈক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।রত্নগর্ভা গৃহপত্নী প্রভাবতী দেবী ও পেশায় উকিল জানকীনাথ বসু ছিলেন তাঁর মাতা ও পিতা। বসু পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
আজ অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৮ তম জন্মদিন। প্রত্যেকবারের মত এবারও নিয়ম মেনে দুপুর ১২:১৫ মিনিটে শঙ্খধনির মাধ্যমে পৈতৃক ভিটে কোদালিয়ায় পালিত হয় নেতাজীর জন্মদিন। সকাল ৯ টায় সুভাষ চন্দ্রের বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় নেতাজী কৃষ্টি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। এই দিনটি অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি সারাদিন ধরেই নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় নেতাজী সংগ্রহশালাও।
সুভাষচন্দ্র বসু থেকে নেতাজী উপাধি নিয়ে দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক বিস্ময়কর গল্প। শৈশব থেকেই সুভাষ পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলেন। সুভাষকে প্রথমে কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয়ান স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল।এরপর বারো বছর বয়সে তিনি কটকের র্যাভেনশা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। স্কুলে পড়ার সময় সুভাষ বিবেকানন্দের বই পড়ায় ভীষণ আগ্রহী হন। আর বিবেকানন্দের আদর্শই তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। স্বামীজির লেখা বই পড়েই জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পান তিনি।
তরুণ সুভাষের রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর হাত ধরেই প্রথম জনসভায় বক্তব্য রাখেন সুভাষ। এমনকি দেশবন্ধুর স্ত্রীও সুভাষকে খুবই স্নেহ করতেন। সুভাষ তাঁকে মা বলে ডাকতেন। রাজনীতিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই কংগ্রেস কমিটির প্রচার সচিবের পদে যোগ দেন তিনি। মাঝে ইংল্যান্ডের যুবরাজের ভারতে আসার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তাঁর জেল হয়। আর জেলমুক্ত হওয়ার পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক হন তিনি। চিত্তরঞ্জন দাশ মেয়র থাকাকালীন কলকাতা পুরসভার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে নিযুক্ত হন সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৭ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর সেক্রেটারি তথা অস্ট্রেলিয়ান যুবতী এমিলির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরপর নেতাজীর হাত ধরে তৈরি হয় ফরওয়ার্ড ব্লক। নতুন দলের হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশবাসীকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে সুভাষের লড়াই আরও জোরদার হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই জওহরলাল নেহেরু এবং মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়। কারণ মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের সঙ্গে সহমত ছিলেন না নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির প্রবল চেইপ ব্রিটিশরা এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পনা করে তখন নেতাজীকে ১৯৪০ সালের ৪ জুলাই কলকাতায় গৃহবন্দী করে।কিন্তু সকলের চোখে ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশে ১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশ ত্যাগ করেন সুভাষচন্দ্র বসু। রটে যায় নেতাজী নিরুদ্দেশ। কিন্তু কেও কল্পনা করতে পারেননি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝড় তুলতে পারে। জাপানিদের সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি। আজাদ হিন্দ ফৌজে প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য ছিল, এটি ভারতীয় যুদ্ধবন্দী এবং ভারতীয়দের নিয়ে গঠিত যারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে বসতি স্থাপন করেছিল এবং জাতির উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তাব করেছিল। আন্দামানে নেতাজী ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন যা জাপানিরা দখল করেছিল।
সুভাষ চন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজকে সংগঠিত করেছিলেন ব্রিটিশদের বিরোধিতা ও যুদ্ধ করতে এবং জাপানের সমর্থনে তাঁর দেশকে মুক্ত করতে । তিনি বার্লিনে ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে আজও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে নেতাজীর মৃত্যুরহস্য। নেতাজীর মৃত্যু কিংবা অন্তর্ধান নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। ভারতের মহান স্বতন্ত্র মনীষীদের মধ্যে নেতাজী ছিলেন একজন, যিনি শুধু অতীতে কিংবা বর্তমানে নয়,ভবিষ্যতের যুব সমাজকেও তিনি প্রেরণা জোগাতেন। তাই দেশবাসী তাঁর মৃত্যু সংবাদ আজও বিশ্বাস করতে পারে না।