স্বপ্ন সত্যি হল বাংলার ঢাকির

জেলা দেশ রাজ্য সংস্কৃতি

নিউজ পোল ব্যুরো : শনিবার ২৫ জানুয়ারী ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারের তালিকা প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় গায়ক, অভিনেতা থেকে শুরু করে ক্রিকেটারের নাম যেমনি রয়েছে তেমন সাধারণ মানুষের অনন্য প্রতিভার জন্য তাঁদের নাম উঠে এসেছে। এরকমই ভারতের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার পদ্মশ্রী ২০২৫এ সম্মানিত হলেন বাংলার এক ঢাকি, যিনি ঢাকের তালে তাঁর জীবন কাটিয়েছেন। ‘পদ্মশ্রী’ তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।

বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অংশ ঢাক। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে বিবাহ, মহালয়া কিংবা অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে ঢাকের বাজনা ছাড়া ভাবাই যায় না। কিন্তু যুগের সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্প ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও, কিছু মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন, আর তাঁদেরই একজন এই পদ্মশ্রী প্রাপ্ত ঢাকি গোকুলচন্দ্র দাস। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার মছলন্দপুরের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই ঢাকের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ছিল। গুরুজনদের কাছ থেকে শেখা এই শিল্পকে তিনি এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বহুবার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও কখনও হাল ছাড়েননি। আর আজকের এই স্বীকৃতি তার সেই কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফসল।

পুরস্কার ঘোষণার পরই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন,’এ যেন স্বপ্নের মতো। কোনদিন ভাবতে পারিনি যে আমার মতো একজন সাধারণ ঢাকি দেশের এত বড়ো সম্মান পেতে পারে। ঢাক শুধু আমার পেশা নয়, আমার জীবন। এটা আমার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া আশীর্বাদ। আজকের এই সম্মান আমি তাদেরই উৎসর্গ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলার ঢাক শুধু এদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েও প্রশংসিত হয়েছে। এই পুরস্কার আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে, যাতে আমি নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্যশালী শিল্প শেখাতে পারি।’

এই সম্মান শুধু একজন ঢাকির নয়, বরং সমগ্র বাংলার সংস্কৃতির জয়। বহু শিল্পী আছেন, যাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও পরিশ্রম দিয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখছেন। পদ্মশ্রী পাওয়া এই ঢাকির সাফল্য দেখিয়ে দিল যে সঠিক প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠা থাকলে কোনও শিল্পই হারিয়ে যায়। এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে ঢাক বাজানো শেখানো, যাতে বাংলার এই লোকশিল্প ভবিষ্যতেও টিকে থাকে। তিনি চান, আরও বেশি তরুণ ঢাক বাজনার প্রতি আগ্রহী হোক এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলার ঢাককে পৌঁছে দিক। এই পুরস্কার শুধু তার নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জয়গান।