৩০ লক্ষ পথ কুকুরের প্রাণের বিনিময়ে বিশ্বকাপ?

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া

নিউজ পোল স্পোর্টস ব্যুরো: বিশ্বকাপ ফুটবল—এটি শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া আয়োজন নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী উন্মাদনা, আবেগ এবং ঐক্যের প্রতীক। তবে, ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনকে ঘিরে একটি ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে—বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশগুলোতে পথ কুকুরদের গণহত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশগুলো সাধারণত শহরগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাস্তার প্রাণীদের উচ্ছেদ বা নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের সময়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তবে ২০৩০ সালের বিশ্বকাপের জন্য এই সংখ্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে, যেখানে ৩০ লাখ পথ কুকুর হত্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করবে তিনটি মহাদেশের ছয়টি দেশ—স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কো, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে। এই দেশগুলোর বেশ কয়েকটিতে পথ কুকুরের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশ্বকাপের মতো বিশাল আয়োজনের আগে সাধারণত শহর পরিষ্কার ও পর্যটকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির নামে সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রাস্তার প্রাণীদের নির্মূলের পথ বেছে নেয়। ডেইলি মেইল নামক এই জনপ্রিয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরোক্কোর কুকুরদের বিষাক্ত স্ট্রিকনিন দিয়ে বিষপ্রয়োগ করে মেরে ফেলা হবে, এছাড়া কুকুরদের দেখলেই গুলি করা হবে। শুধু তাই নয় গুলি ও বিষপ্রয়োগের পর যে কুকুর বেঁচে থাকবে তাঁদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে।

এই অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই পশু অধিকার সংগঠনগুলো ও পশুপ্রেমী মানুষরা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন পিইটিএ ও ডব্লু ডব্লু এফ এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা মতে, বিশ্বকাপের জন্য পথ কুকুরদের হত্যা করা সম্পূর্ণ অমানবিক এবং বর্বরতা। এরমধ্যেই ‘গুডঅল’ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ফিফাকে লিখিত জানানো হয়েছে, নয় কুকুর নিধন বন্ধ হবে নয়তো বিশ্বকাপ বন্ধ হবে।

বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরামর্শ দিচ্ছে—

১. নির্বীজ কার্যক্রম চালু করা – যাতে পথ কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
২. আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা – যেখানে কুকুরদের রাখা হবে।
৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধি – যাতে মানুষ পথ কুকুরদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।

ফিফা যদি সত্যিই ‘ফুটবল ফর অল’ নীতিতে বিশ্বাস করে, তবে তাদের অবশ্যই বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টি করা উচিত যাতে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ হয়। ফুটবল বিশ্বকাপ কেবল একটি খেলা নয়, এটি মানবতা ও নৈতিকতারও প্রতিচ্ছবি হওয়া উচিত।
৩০ লাখ পথ কুকুর হত্যা করা হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এ ধরনের আশঙ্কা অমূলক নয়। বিশ্বকাপের মতো বিশাল আয়োজনের অজুহাতে যদি প্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়, তাহলে এটি হবে এক চরম মানবতাবিরোধী কাজ। এখনই সচেতনতা তৈরি করা এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ গড়ে তোলা জরুরি।