অমৃতস্নানে বিশৃঙ্খলা, পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১৪

breakingnews দেশ

নিউজ পোল ব্যুরো, প্রয়াগ রাজ : আজ বুধবার মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে মহাকুম্ভে অমৃত স্নানকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যার জেরে ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখানে পুণ্যার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হলেন অনেকেই। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী কমপক্ষে ১৪ জন মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিন মৌনী অমাবস্যায় ‘অমৃত স্নান’কে ঘিরেই ধাক্কাধাক্কি ও ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। সেই ভিড়ে অনেকেই টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক। জখম পুণ্যার্থীদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছেন।

বুধবার ভোরে মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। জখম মহিলাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে জানা গিয়েছে। কুম্ভমেলা প্রাঙ্গনের, সেক্টর ২ হাসপাতালে ২৫-৩০ মহিলা ভর্তি বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার জেরে গঙ্গায় ‘অমৃত স্নান’ও পিছিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সঙ্গমের কাছে ১১ থেকে ১৭ নম্বর স্তম্ভের মধ্যে পদপিষ্ট হন বহু মানুষ। এই ঘটনার জেরে বুধবার অমৃত স্নানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আখরা পরিষদ। মেলা কর্তৃপক্ষের তরফে মাইকিং করে পুণ্যার্থীদের ঘাট থেকে সরে যেতে বলা হয়। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কর্নাটকের বাসিন্দা সরোজিনী নামের এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘দু’টি বাসে চেপে আমরা ৬০ জন এসেছিলাম। আমাদের গ্রুপে আমরা ন’জন ছিলাম। হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। আমরা ভিড়ের মধ্যেই আটকে যাই। অনেকেই টাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েন। তাঁদের ওপর দিয়ে পুণ্যার্থীরা মাড়িয়ে চলে যান। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’

জগৎগুরু সাই মা লক্ষ্মীদেবী সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘মৌনী অমাবস্যা শুধুমাত্র আমাদের সন্ন্যাসীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়,  সমস্ত হিন্দুদের কাছে এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই নীরবে পালন করেন দিনটি। আত্মার বিকাশ ঘটে।’

উল্লেখ্য, মৌনী অমাবস্যার দিন পুণ্যস্নানের জন্য আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলা প্রাঙ্গণে গাড়ি ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার পরেও এড়ানো গেল না বিপত্তি!

প্রসঙ্গত, মৌনী অমাবস্যায় ‘অমৃত স্নান’-এর জন্য পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এ বছর আবার মহাকুম্ভ, ফলে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে দিনটির গুরুত্ব আরও বেশি। এবারের মহাকুম্ভে ‘ত্রিবেণী যোগ’ ও রয়েছে, যা ১৪৪ বছরে একবারই ঘটে। তাই লক্ষ লক্ষ মানুষ মহাকুম্ভে জড়ো হয়েছেন পুণ্য অর্জনের আশায়। আজ ত্রিবেণী সঙ্গমে প্রায় ১০ কোটি মানুষ জড়ো হতে পারেন বলে প্রশাসনের তরফে আগেই ইঙ্গিত মিলেছিল। এদিন সেই মতো মৌনী অমাবস্যায় ‘অমৃত স্নান’-এর জন্য জমায়েত হন তাঁরা। আর তখনই ঘটে যায় বিপত্তি। কয়েকদিন আগে কুম্ভ মেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও তখন কোন হতাহতের খবর মেলেনি। কিন্তু আজ সকালে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নানের জন্য প্রায় ১০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দেওয়ার জন্য। তখনই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।