নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : ‘বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে বসন্ত এসে গেছে’…… এই শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে দাঁড়িয়ে লাইনগুলি শুনলেই প্রেমে মজতে ইচ্ছে করে আপাদমস্তক বাঙালির।
আর এছাড়া যে কথাটি মনে হয় তা হল প্রেম নিবেদনের বিশেষ দিনের কথা। আধুনিক বাঙালির অন্যতম প্রেমের দিন মানেই সরস্বতী পুজো, যা বাঙালির ১৪ ফেব্রুয়ারি! অর্থাৎ বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বিশেষ করে যুবক যুবতী ও স্কুল পড়ুয়ারা সারা বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থেকে বছরের শুরু থেকেই। বিশেষ দিনটি কোথায় কিভাবে কাটাবে প্রিয়জনের সঙ্গে তা নিয়ে শুরু থেকেই চলে প্ল্যানিং। গতকাল সেক্টর ফাইভে ‘ফাইভ অ্যান্ড ডাইম’ রেস্টুরেন্টে বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে এক চা চক্রের আয়োজন করা হয়।
এদিনের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টলিউড অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দোপাধ্যায়, ডক্টর রূপালী বসু (প্রেসিডেন্ট ব্র্যান্ড রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপ), বিশিষ্ট মডেল মাধবীলতা মিত্র ও রেস্টুরেন্টের কর্ণধার অপেক্ষা লাহিড়ী।
এদিন অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রেম আগেও ছিল এখনও আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সময়ের তালে তালে প্রেমের মানেটাই অনেকটা পাল্টেছে। আমরা ছোটবেলায় সরস্বতী পূজোর দিন উপোস করে থাকতাম। অঞ্জলী দেওয়ার পর খিঁচুড়ি প্রসাদ ছিল বাধ্যতামূলক। আমাদের মাঝামাঝি বয়সেও পুজোর দিন মেয়েদের অনেক ছেলে ভালোবাসা নিবেদন করলেও, আমি যেহেতু একটু রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে তাই এই বিষয় থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব থাকতাম। পরবর্তীকালে যার সঙ্গে আমার বিয়ে হয় তাঁর সঙ্গেই সুখে দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছি। আমার কন্যা সন্তানের জন্মদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি তাই আলাদাভাবে বরের সঙ্গে সময় কাটানো হয় না বরঞ্চ কন্যার সঙ্গেই কাটে। আমার নিজের বাড়িতে পুজো হয়। পুজোর তদারকী থেকে শুরু করে কি রান্না হবে পুরোটাই দেখতে হয় সেই নিয়ে ব্যাস্ততা থাকে। কিন্তু এটা বলাই বাহুল্য আগেকার দিনে মানুষের মধ্যে যে প্রেম ভাব ছিল বা যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা বন্ডিং ছিল তা ব্যস্ততার যুগে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দিনকে দিন ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। জেন্ডার ইকুয়ালিটির ক্ষেত্রে কোথাও একটা আদি প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে’।
এদিন রূপালী বসু বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় আমরা যে প্রেম করবো বা বন্ধু বা অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করবো তা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। বর্তমান যুগে শুনি বন্ধুত্ব করার জন্য অনেক ডেটিং সাইট রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু সেই সাইট থেকে কি আর প্রেম বা ভালোবাসা যা আমৃত্যু পর্যন্ত থাকবে তা থাকা সম্ভব?’
মাধবীলতা মিত্র জানান, ‘আমার দুটো সত্বা, এক আমি বাঙালি এবং দীর্ঘ বহুবছর ধরে মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে মাথা উঁচু করে কাজ করছি। জীবনে একবারই আমার প্রেম এসেছিল তাঁকেই আমি বিয়ে করেছি। এখন সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার করছি। যদিও তাঁর কাজের ক্ষেত্র ও আমার কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তা হলেও আমাদের ভালোবাসা বা সময় পেলেও একসঙ্গে কাটানো কোনও অংশেই কমেনি। কিন্তু হ্যাঁ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও পাল্টাতে হবে এবং প্রত্যেক মানুষের উচিৎ সে যাই কিছু করুক না কেন তার এক্তিয়ারের ভেতরে যেন থাকে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রকৃত ভালোবাসা হয়তো তার মানে এবং উপলব্ধি এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে অনেকটাই আলাদা, সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে সময়ের তালে তালে।’
অপেক্ষা লাহিড়ী জানান, ‘আমি নিজে কো-এড স্কুলে পড়েছি তাই ছেলে মেয়েদের ওপর খুব একটা পার্থক্য কখনও করিনি। এমনি সময় সরস্বতী পুজোর দিন ভালো শাড়ি পরে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কতক্ষণ আড্ডা মারবো সেদিকেই মন পড়ে থাকত। আর রইলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, সে তো সম্প্রতি কয়েকবছর পর শুরু হয়েছে, একটি জনপ্রিয় সিনেমার পর। আমি মনে করি প্রেম এমনই একটা জিনিস যা মানুষকে আরও কাছে আনে এখন সবাই কর্মে ব্যস্ত। যৌথ পরিবার ভেঙে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। আগে যেমন বাড়িতে খেতে বসার সময় বা সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে বাড়িতে জ্যাঠা কাকাদের সঙ্গে বসে গল্প করা, বা খাবার শেষে গল্প করা তা কেমন যেনও হারিয়ে যাচ্ছে। এটা যদি ১০ শতাংশ ধরে রাখতে পারি তাহলে সংসারে এত ঝামেলা ঝগড়া বিবাদ অনেকটাই কমে যাবে।’