গান্ধীজির তিরোধান দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য রাজ্যপালের

কলকাতা জেলা দেশ রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্যারাকপুর : আজ ৩০ জানুয়ারী জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ৭৮তম তিরোধান দিবস। সারাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে এই বিশেষ দিনটি। এই উপলক্ষে ব্যারাকপুরের ঐতিহাসিক গান্ধী ঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন রাজ্যের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গান্ধী ঘাটের পবিত্র পরিবেশে সকাল থেকেই নানা কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় জাতির জনককে। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনিক আধিকারিক, এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পর বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক নন, তিনি সারা বিশ্বের শান্তি, অহিংসা এবং সম্প্রীতির প্রতীক। তাঁর আদর্শ আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।’ ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাট ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মারকস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসের গুলিতে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু হয়। গান্ধীজির ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর দেহভস্ম দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভাজিত করা হয়, এবং ব্যারাকপুরের এই ঘাটেও তাঁর দেহভস্মের কিছু অংশ বিসর্জন দেওয়া হয়। সেই থেকেই এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতি বছর এই দিনটিতে এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিরা মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন। রাজ্যপাল বলেন, ‘গান্ধীজির অহিংসা ও সত্যাগ্রহ নীতি শুধু রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য নয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যখন গোটা বিশ্ব হিংসা ও সংঘাতের মুখোমুখি, তখন গান্ধীজির শিক্ষা আমাদের আরও বেশি করে পথ দেখাতে পারে।’

এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা গান্ধীজির জীবনদর্শনের গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সমাজকর্মীরাও বলেন, গান্ধীজির আদর্শ শুধু বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা জরুরি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরাও অনুভব করেন, গান্ধীজির জীবন ও দর্শন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। উপস্থিত এক ছাত্র বক্তৃতায় বলেন, ‘আজকের যুগে যেখানে সামাজিক বিভেদ, হিংসা এবং অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সেখানে গান্ধীজির আদর্শ আমাদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে।’

গান্ধীজির তিরোধান দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার এই শ্রদ্ধানুষ্ঠান শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তাঁর আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি প্রয়াস। ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাট আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে, মনে করিয়ে দেয় তাঁর শান্তি, সম্প্রীতি ও অহিংসার বার্তা, যা ভবিষ্যতেও পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।