অনিরুদ্ধ সরকার
প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ আয়োজিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। কারণ এখানেই গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গম রয়েছে। তাই এই স্থানের গুরুত্ব অন্য তিন স্থানের চেয়ে বেশি। মনে করা হয়, শাহী স্নানের সন্ধিক্ষণে যিনি এই তিন নদীর সঙ্গমে স্থান করেন, তাঁর মুক্তিলাভ হয়।
সমুদ্র মন্থনের কথা শিব পুরাণ, মৎস্য পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ-সহ প্রায় সব পুরাণেই উল্লেখ আছে। সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত কলস উঠে আসে। অমৃতের অধিকার নিয়ে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সংঘাত বাধে। অসুররা অমৃত কলস দখল করলে বিষ্ণু মোহিনী রূপ নিয়ে অসুরদের ভুলিয়ে কলস ফিরিয়ে আনেন। অমৃতের অধিকার নিয়ে সংঘাত তীব্র হলে দেবরাজ ইন্দ্রের ছেলে জয়ন্তর হাতে কলস তুলে দেন বিষ্ণু। জয়ন্ত কাকের রূপ নিয়ে কলস ঠোঁটে করে উড়ে যান। সেই সময় কয়েক ফোঁটা অমৃত চার জায়গায় চলকে পড়ে। এই চারটি স্থান হল – প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িন, হরিদ্বার ও নাসিক। যেখানে যেখানে অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল, সেখানে সেখানে কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়।
এই মহা কুম্ভমেলার প্রথম লিখিত প্রমাণ চিনা বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, যিনি রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বের সময় ভারত পরিদর্শনে আসেন। মেগাস্থিনিস তাঁর ‘ইন্ডিকা’য় লিখছেন, “ভারতকে অপরূপ করেছে প্রয়াগের নীলসবুজ এই মহাক্ষেত্র।”
মহাকুম্ভে অনেক সেলিব্রেটি সাধুর যেমন দেখা মেলে সেরকম সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদেরও দেখা মেলে। স্কন্দপুরাণ বলছে, যমুনার জলে সাত দিন, সরস্বতীর জলে তিন দিন, গঙ্গাজলে এক দিন স্নান করলে সর্বপাপ নাশ হয়।
মহাত্মাদের কথায়, গঙ্গার কাছে সবাই সমান। গঙ্গা সকলকে মিলিয়ে দেয়। যেমন মিলেছে যমুনা, সরস্বতী, তেমনই গঙ্গা মিলিয়ে দেয় ধনীর সঙ্গে দরিদ্রকে, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর সঙ্গে এক সংসারীকে। একই নদীতীরে কাপড় বদলাচ্ছেন কোটিপতি ব্যবসায়ী থেকে নিঃস্ব ভিক্ষুক। ধর্মবিশ্বাস, এই মহা পুণ্যলগ্নে সবাই সমান।
কুম্ভমেলাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। সঙ্গমতীরে রাতের কুম্ভ যেন এক টুকরো পুরাণগ্রন্থ, যা বার বার পাঠ করতে হয়। তবু স্বাদ মেটে না।