নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা:– কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে আবারও এক মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়া গেল। দ্বিতীয় বর্ষের এমবিবিএস পড়ুয়া এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। ওই ছাত্রীর বয়স ২০ বছর। ওই তরুণী কামারহাটি এএসআই হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকতেন। সেখানেই নিজের রুম থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় গত ৩০ জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত ওই ছাত্রীর নাম আই ভি প্রসাদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর মা সুমিত্রা হেমব্রম কামারহাটি এএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক ও বাবা মহারাষ্ট্রের স্টেট ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার। বৃহস্পতিবার রাতে আইভির মা- মেয়ের ফোনে একাধিকবার ফোন করেও কোনো উত্তর পাননি। এরপর সন্দেহ হওয়ায় তিনি দরজা খুলে দেখেন মেয়ে ঘরের মধ্যে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা তদন্ত শুরু করেন। পুলিশ সূত্রে খবর , ওই ছাত্রী স্কার্ফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, মৃত ওই ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, এরজন্য তাঁর মানসিক চিকিৎসাও চলছিল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন আইভি। এমনকি এর আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে এই আত্মহত্যার পিছনে অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আরজি কর সূত্রে খবর, মৃত ছাত্রীর বাবা ও মায়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁদের দাম্পত্য কলহ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে সেই কলহের প্রভাব পড়েছিল আইভির ওপর। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও চূড়ান্ত কিছু জানানো হয়নি।
পুলিশ এসে মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, কোন সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরমধ্যেই পুলিশ আইভির মা ও অন্যান্য আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঘটনার পর থেকে মৃত ছাত্রীর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক মেধাবী ছাত্রীর এভাবে অকালে চলে যাওয়ায় মেডিক্যাল কলেজেও শোকের পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানসিক অবসাদ, পারিবারিক অশান্তি নাকি অন্য কোন কারণে মৃত্যু হয়েছে – সবদিক থেকেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে পুলিশ, যাতে মেয়েটির সাম্প্রতিক মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠোর পড়াশুনা, প্রতিযোগিতা ও পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি নজর দেওয়া উচিৎ।