নিজস্ব প্রতিনিধি, উত্তর ২৪ পরগনা : উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার মাটিয়া থানার স্বরূপনগরে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ও নির্মম ঘটনা। অভিযোগ, বুলেট বাইক আনতে না পারায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সহ পরিবারের ছয়জন মিলে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সবাই পলাতক। মাত্র আট মাস আগে হাসনাবাদ থানার বরুনহাট রামেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুতলা গ্রামের বাসিন্দা তুহিনা পারভীনের (২৪) বিয়ে হয়েছিল স্বরূপনগরের সাব্বির আহমেদ মণ্ডল (২৭)-এর সঙ্গে। মুসলিম শরীয়ত মেনে রেজিস্ট্রি বিয়ে হলেও বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে পণের দাবিতে। কখনও বড় অঙ্কের টাকা, কখনও দামি আসবাবপত্র— চাহিদা বেড়েই চলছিল।
চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকালে তুহিনার স্বামী সাব্বির তাঁকে জানান, বাপের বাড়ি থেকে একটি বুলেট বাইক আনতে হবে। অথচ তুহিনার পরিবার অত্যন্ত সাধারণ। তাঁর বাবা খলিলুর রহমান গাজী গৃহশিক্ষকতা ও চাষবাস করে সংসার চালান। বিয়ের সময় সাধ্যের মধ্যে সোনা, গয়না, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাইক কেনার সামর্থ্য ছিল না। যখন মেয়ের কাছে বুলেট গাড়ির জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়, তখন সে পরিবারকে জানায়। কিন্তু বাবা-মা কিছুই দিতে পারেননি। ফলে তুহিনার উপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অভিযোগ, বিগত ৪৮ ঘণ্টা ধরে অত্যাচারের মাত্রা চরমে ওঠে।
গত মঙ্গলবার দুপুরবেলায় হঠাৎই খবর আসে, তুহিনা আত্মহত্যা করেছে এবং ধান্যকুড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁর মরদেহ রয়েছে। এই খবর পেয়ে তুহিনার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, মেয়ের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যা সন্দেহজনক। পরিবারের অভিযোগ, তুহিনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তারপর তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃত গৃহবধূর বাবা খলিলুর রহমান গাজী মাটিয়া থানায় জামাই সাব্বির আহমেদ মণ্ডল সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর মেয়ে বারবার ফোন করে জানিয়েছিল যে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে বুলেট বাইক আনতে বলছে। কিন্তু তা দিতে না পারায় তাঁরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।

পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বোঝা যাবে, এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত খুন। এদিকে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সহ পরিবারের ছয়জন পলাতক। পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। মৃত গৃহবধূর মা জাহানারা বিবি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘শুধু একটা বাইকের জন্য আমার মেয়েকে মেরে ফেলল! কত অত্যাচার সহ্য করেছিল সে, বারবার ফোন করেও কিছু পায়নি। আমরা গরিব বলে আমাদের মেয়েকে এভাবে কেড়ে নিল!’
বাবা খলিলুর রহমান গাজী বলেন, ‘আমরা কিছুতেই মেয়ের এই নির্মম মৃত্যুকে মেনে নেব না। পুলিশ যেন দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে এবং কঠোর শাস্তি দেয়।’ এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, এখনও সমাজে পণপ্রথা নির্মূল হয়নি। শুধুমাত্র একটি বাইকের জন্য একটি তরতাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ কত দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করতে পারে এবং তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় কিনা।